বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্লাষ্টিক দূষণ। এরইমধ্যে সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণীর পেটে ক্ষুদ্র আকারের প্লাস্টিক বা মাইক্রো প্লাষ্টিকের অস্তিত্ব মিলেছে। এমনকি লবণেও মিলছে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক। এতে ঝুঁকির মুখে মানব জীবন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের এক যৌথ গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে।
চিকিৎসকদের মতে, প্লাস্টিকের কণা মানুষের শরীরে ক্যান্সারসহ দুরারোগ্য ব্যাধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদী। যা দিয়ে বছরে কয়েক হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য বঙ্গোপসাগরে এসে পড়ছে।
গবেষকরা জানান, বাঁকখালী নদীর পানিতে ভাসমান অবস্থায় প্রতি র্বগকিলোমিটারে ২০ হাজারেরও বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।
এছাড়াও মহেশখালী, টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপ থেকে সংগৃহীত অপরিশোধিত লবণে কেজিতে প্রায় এক হাজারটি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যায়। আর বাণিজ্যিক পরিশোধিত লবণে প্রতি কেজিতে পাওয়া গেছে ৭০০ থেকে ৯০০টি।
এদিকে লাবণী পয়েন্টে সমুদ্রসৈকত ও উখিয়া-রামুর সংযোগস্থল কাঁকড়া বিচেও প্লাস্টিক-দূষণের মাত্রা কক্সবাজার শহরের তুলনায় তিনগুণ বেশি বলে জানিয়েছে গবেষকরা। যা সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের জন্যও মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।
গবেষকরা আরো জানান, মাইক্রোপ্লাস্টিক বা প্লাস্টিক কনা আকারে খুবই ছোট। এজন্যে মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণি এগুলোকে খাবার ভেবে খেয়ে ফেলে। আর প্লাস্টিক খাওয়া সেই মাছ খাচ্ছে মানুষ।
বঙ্গোপসাগরে এ প্লাস্টিক দূষণ ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ও মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
এ বিষয়ে এক বছর ধরে গবেষনা চালিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. হারুণুর রশীদ।
“আমরা যেখানেই প্লাস্টিকের দূষণ করি না কেন, তা সাগরে গিয়ে পৌঁছায়। সাগরে কিছু প্লাস্টিক ভাসমান আর কিছু প্লাস্টিক তলদেশে থাকে। এ উভয় প্রকার প্লাস্টিকই সমুদ্রের প্রাণিকূলের জন্য ক্ষতিকর,” বলেন প্রফেসর রশীদ।
তিনি বলেন, “বড় আকারের প্লাস্টিক পানির তোড়ে দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গে। ভাঙ্গা অংশগুলো সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবে পুনরায় ভেঙ্গে ন্যানো, মাইক্রো ও ম্যাক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়।”
“এই ভাঙনের ফলে সৃষ্ট প্লাস্টিকের কিছু উপাদান (ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য, যেমন- বিসফিনল-এ নির্গত হয়) সামুদ্রিক মাছেরা খাবার হিসেবে গ্রহন করে। আর ওই মাছ খেলে মানবদেহ বিসফিনল-এ দূষণ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে,” উল্লেখ করেন হারুণুর রশীদ।
মাছ ছাড়াও সমুদ্রের অমেরুদন্ডী প্রাণিও মাইক্রোপ্লাটিক ‘ফিল্টার করে’ গ্রহণ করে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, সমুদ্রের ক্ষুদ্র প্রাণি বা জু-প্লাঙ্কটন এসব মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণ করে। এসব ক্ষুদ্র প্রাণিকে খাচ্ছে বিভিন্ন মাছ। আর সে মাছ খেতে গিয়ে মানুষও মাইক্রোপ্লাস্টিক খেয়ে থাকে।
গবেষক দলে আরো ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সহকারি অধ্যাপক ড. কইজার আহমেদ সুমন এবং কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তিকেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শাহনুর জাহেদুল হাসান।
বাংলাদেশ, মিয়ানমার, চীন, ভারত, নেপাল ও ভূটানসহ বিশ্বের অন্য নদীগুলো থেকে প্রতিবছর ১২ থেকে ২৪ কোটি মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য বঙ্গোপসাগরে যাচ্ছে বলে জানান বিজ্ঞানীরা।