মরুর অদ্ভুতুড়ে ১০ উদ্ভিদ

বাওবাব বৃক্ষ। ছবি: সংগৃহীত

মরু অঞ্চলের বালুচরে দেখা মিলে বেশ কিছু বৃক্ষের। তবে এগুলোর সবগুলোই সাধারণ বৃক্ষ নয়, এদের রয়েছে অদ্ভুত কিছু প্রাকৃতিক শক্তি। চরম প্রতিকূল পরিবেশেও এগুলো টিকে থাকতে পারে সেই শক্তির বলে।

জেনে নেয়া যাক, সেসব উদ্ভিদের অল্প কিছু প্রজাতি সম্পর্কে। যারা মরু অঞ্চলে দিনের পর দিন টিকে আছে তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে।

বাওবাব বৃক্ষ

উদ্ভিদ জগতের সবচে বেশি পানি ধারণ ক্ষমতা বাওবাব নামক গাছের। মাদাগাস্কারে দেখা মিললেও আরব মরুভূমি, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া মরুভূমিতেও এর অস্তিত্ব মিলে।

সাধারণত হাজার বছর আয়ুষ্কালের এই গাছগুলোর গুড়িতে এক থেকে দেড় লাখ লিটার পানি জমা রাখতে পারে। তবে কোন কোন এলাকায় পানি ধারণের পরিমান প্রায় ছয় লাখ লিটারও হয়ে থাকে। এঞ্জিওস্পার্ম জাতীয় এই উদ্ভিদগুলো বেশ প্রাচীন এবং বর্তমানে বিপন্ন প্রায়।

ডেজার্ট আয়রন উড। ছবি: সংগৃহীত

ডেজার্ট আয়রন উড

মরুভূমির প্রাণ বলা হয় এ উদ্ভিদকে। একটি আয়রন উড বৃক্ষ মরুভূমির পথিকের কাছে আশির্বাদস্বরুপ। কেননা এই গুল্ম বৃক্ষটি কাছাকাছি থাকা যেকোন বস্তুর তাপমাত্রা কমিয়ে দিতে পারে প্রায় ১৫ ডিগ্রী।

উত্তর আমেরিকায় প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এই উদ্ভিদটিও বর্তমানে বিরল প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। নীল, ধুসর পাতার রঙের এই উদ্ভিদের বৃদ্ধিও যথেষ্ট ধীর গতির। মরুভূমিতে টিকে থাকতে অভ্যস্ত বলেই প্রায় ১৫’শ বছর বাঁচতে পারে।

বেসবল প্ল্যান্ট। ছবি: সংগৃহীত

বেসবল প্ল্যান্ট

এ উদ্ভিদটি দেখে অনেকেই বেসবল বলের মনে করে ভুল করতে পারেন। কেননা, এটির আকার, রঙ প্রায় বেসবলের মতোই। ১৫ সেন্টিমিটার আকৃতি, হাল্কা বা গাঢ় সবুজ রঙ, হুলুদাভ সবুজ ফুলের মিশেলে একটি অনিন্দ্য সুন্দর এই বৃক্ষটি।

মূলত মরুভূমির ক্যাকটাস হলেও অতি সংগ্রহে এর স্থান হয়েছে কেবল বোটানিক্যাল গার্ডেন আর নার্সারিগুলোতেই।

ওয়েলউইটসিয়া মিরাবিলিস। ছবি: সংগৃহীত

ওয়েলউইটসিয়া মিরাবিলিস

কাণ্ডবিহীন দুই পাতা বিশিষ্ট এই বৃক্ষটি কিছুটা অদ্ভুত আকৃতির। দীর্ঘায়ু উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে এর নাম রয়েছে বলেও জানা গেছে। নামিবিয়া অঞ্চলে দেখা গেলেও অন্যান্য মরুভূমিতেও কম বেশি পাওয়া যায়। এই উদ্ভিদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এদের শেকড় খুবই গভীর।

কথিত আছে পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে হলেও এরা পানি টেনে আনতে পারে। আর দূর থেকে এলোমেলো মনে হলেও কাছ থেকে দেখলেই বুঝতে পারবেন বৃক্ষটি অন্য বৃক্ষের মতো নয়, কিছুটা ভিন্ন।

হিডনোরা আফ্রিকানা।ছবি: সংগৃহীত

হিডনোরা আফ্রিকানা

শুধুমাত্র রঙের সৌন্দর্যই নয় মরুভূমিতে একটি ভাল খাদ্যের উৎস হিসেবে পাওয়া যাবে হিডনোরা আফ্রিকানা উদ্ভিদটি। অনেকটা আলুর মতো স্বাদের এই উদ্ভিদটি খেতে পারেন নিশ্চিন্তে।

প্রচুর পানি জমা করে রাখে বলে উদ্ভিদটি মরু অঞ্চলে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে। ফুলের রঙ লাল বা গাঢ় কমলা ও ফলটি আলুর মতো দেখতে।

ব্যারেল ক্যাকটাস। ছবি: সংগৃহীত

ব্যারেল ক্যাকটাস

আমেরিকার মরুভূমিতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে ক্যাকটাসগুলোর দেখা মেলে তার নাম ব্যারেল ক্যাকটাস। সাধারণত ৪-১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এরাও শরীরে প্রচুর পানি জমা করে রাখতে পারে। তাই মাটিবিহীনও পাঁচ থেকে ছয় বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে এরা। এর কাঁটাগুলো পোকামাকড় থেকে নিজেদের রক্ষা করে এবং পানি ধারণেও সহযোগীতা করে।

সিলভার টর্চ ক্যাকটাস। ছবি: সংগৃহীত

টর্চ ক্যাকটাস

টর্চ বা সিলভার টর্চ ক্যাকটাস একটি বহুবর্ষজীবী ক্যাকটাস। আকৃতিগত কারণেই এর এরুপ নামকরণ করা হয়েছে। সাধারণত ৩ মিটার লম্বা এবং ৬ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট হয়ে থাকে। অতিরিক্ত আলো পছন্দ করলেও এটি অতিরিক্ত তাপে বাঁচতে পারেনা। তাই মরুভূমির ছায়াযুক্ত অঞ্চলে বেশি দেখা যায়।

টেডি বিয়ার কোলা। ছবি: সংগৃহীত

টেডি বিয়ার কোলা

টেডিবিয়ার কোলা বা জাম্পিং কোলা নামক ক্যাকটাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্যের সৌন্দর্য। এর কাঁটাগুলো এতোই ঘন হয় যে আলাদা করে বোঝা যায় না। বরং এক আবরণ হিসেবে ধরা দেয়। একই স্থানে ছোট ছোট ঝোপ আকারে জন্মায় যার একেকটি গাছ থেকে অনেকগুলো কান্ড বের হয়।

উলেমি পাইন। ছবি: সংগৃহীত

উলেমি পাইন

প্রায় ২০ কোটি বছর আগের জিমনোস্পার্ম গোত্রের উদ্ভিদটি হচ্ছে উলেমি পাইন। জীবন্ত জীবাশ্মগুলোর মধ্যে এই একটি মাত্র প্রজাতিই মরুভূমিতে টিকে আছে।

এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি অতি উচ্চ তাপমাত্রা এবং অতি নিম্ন তাপমাত্রা উভয়তেই ভালভাবে টিকে থাকতে পারে। প্রতিটি বৃক্ষের নারী পুরুষ উভয় প্রজাতি বিদ্যমান।

উলেমি পাইন। ছবি: সংগৃহীত

সাগুয়ারো ক্যাকটাস

আমেরিকার আরিয়ানা রাজ্যের রাষ্ট্রীয় ফুল কি জানেন? ‘সাগুয়ারো ক্যাকটাস’ নামের এ উদ্ভিদের ফুলটিই সেখানকার রাষ্ট্রীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে। ২০০ বছর আয়ুষ্কালের এই উদ্ভিদটি মূলত এঞ্জিওস্পার্ম গোত্রের উদ্ভিদ। সর্বোচ্চ ২০ মিটার উচ্চতার এ বৃক্ষের সাধারণত কোন শাখা প্রশাখা দেখা যায় না। আর শাখা জন্মাতেও প্রায় শত বছর সময় লেগে যায়।

এই অদ্ভুত সুন্দর বৃক্ষগুলো আপনি মরুভূমিতেই দেখতে পাবেন যার সবগুলোই প্রতিকুল পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম। কোন কোনটি আবার সৌন্দর্যের বিচারে অতুলনীয়।