
পাখিদের মধ্যে মূলত প্যারট বা টিয়া প্রজাতি বেশ বুদ্ধিমান হয়ে থাকে। ছোট্ট একটি মস্তিষ্কে তারা চেনার ক্ষমতা ধারণ করে, স্মৃতিতে শব্দ কিংবা বস্তু ধারণ করে। চমকে দেয়ার মত আরো অনেক বুদ্ধিবৃত্তিক কাজও করে আফ্রিকার গ্রে প্যারট।
পাখিদের মধ্যে বেশ চমক দেখাতে পটু আফ্রিকান এই গ্রে প্যারট। আফ্রিকা, ক্যামেরুন, আইভরি কোস্ট, ঘানা, উগান্ডা নিবাসী এই পাখি মানুষ বাদে বিশ্বের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রাণীদের তালিকায় উপস্থিত। Psittacosis প্রজাতির এই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম Psittacus erithacus হলেও কঙ্গো গ্রে প্যারট, ওল্ড ওয়াল্ড প্যারট নামেও এরা বেশ পরিচিত।
ধূসর কালো পাখিটির বাহ্যিক সৌন্দর্যের মূল আকর্ষণ হল এদের টকটকে লাল লেজ। যদিও কোন কোন পাখির লেজের অংশের বাইরেও লালচে আভা থাকে। তবে ধূসরে এই উজ্জ্বল লাল রঙ এক অন্য রকম সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। সাধারণ পাখিদের মত বাহ্যিক গঠন বা রঙ দেখে এদের লিঙ্গ নির্ধারণ করা কিছুটা কঠিন বটে।
প্যারটের মধ্যে বেশিরভাগেরই মানুষের সাথে মিশে যাওয়ার কিংবা পোষ মানার প্রবণতা দেখা যায়। তবে গ্রে প্যারটের এই ক্ষমতা বেশ প্রবল। সঙ্গপ্রিয় গ্রে প্যারট অনুকরণপ্রিয়, কথা বলতে ভালোবাসে এবং বোঝাপড়া তৈরি করতেও এদের জুড়ি নেই। ড. ইরিন পিপারবার্গ নামের একজন মনোবিজ্ঞানী মানুষের সাথে আফ্রিকান গ্রে প্যারটের বুদ্ধিবৃত্তির তুলনা করার জন্য অ্যালেক্স নামক একটি গ্রে প্যারটের ওপর গবেষণা করেছেন দীর্ঘদিন।
অ্যালেক্স হল সবচেয়ে বিচক্ষণ আফ্রিকান গ্রে প্যারট, যে ১০০ এর বেশি শব্দ মুখস্থ করেছে, নিজের আবিষ্কারের লিস্টে রয়েছে বেশ কিছু শব্দ। রঙ চেনার বেলায়ও এই পাখি বেশ পটু। সময়োপযোগী কথা বলা, সাড়া দেয়া, শুভেচ্ছা জানানো কিংবা বিরক্তি প্রকাশ প্রায় সবকিছুই ছিল অ্যালেক্সের নখদর্পনে।
ইরিন পিপারবার্গ বলেন, অ্যালেক্স যা যা করত তা একজন মানবশিশুর আয়ত্ত করতে প্রায় ২ বছর সময় লাগে। যেখানে অ্যালেক্স সময় নিয়েছে ২১ সপ্তাহ। ছোট্ট মাথায়, ছোট্ট একটুখানি মগজে এত বুদ্ধিমত্তা গ্রে প্যারটের পক্ষেই রপ্ত করা সম্ভব, যা সত্যিই বিস্ময়কর।
মানুষের মতই এই পাখির গড় আয়ু প্রায় ৪০-৬০ বছর। ফলাহারী এই পাখি বনে বনে উড়ে ফল খেয়েই বাঁচে। এদের ঠোঁট আর বিশাল ভারী ডানা এদের আত্মরক্ষার অস্ত্র। তবে বন্য এই পাখির গড় আয়ু যেমন কমে ২৫-৩০ এ চলে এসেছে তেমনি এদের সংখ্যাও বেশ উল্লেখযোগ্য হারে কমছে। ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায় ক্যামেরুনে এই পাখির সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। স্থানীয়রা এজন্য দায়ী করেন পোষাপ্রাণীর ব্যবসায়ীদের।
তাদের মতে, রপ্তানির উদ্দেশ্য হাসিলে কিংবা ব্যক্তিগত শখ পূরণে প্রাধান্য দিতে গিয়ে এই বুদ্ধিমান পাখিদের প্রজাতি আজ হুমকির মুখে। প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএনের বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা পাখির তালিকায় রয়েছে আফ্রিকান গ্রে বার্ডের নাম। ব্যক্তিগত শখ কিংবা রপ্তানি করে আয় করার চেয়ে প্রকৃতিতে এই সুন্দর পাখি টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা যে কত তীব্র তা পাখি শিকারীদের বোঝানো গেলেই বিলুপ্ত হওয়া থেকে গ্রে প্যারটকে রক্ষা করা যাবে বলে মনে করেন প্রাণীবিদরা।