
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার পাহাড় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বন্যহাতির মরদেহ। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিকল্পিতভাবে বৈদ্যুতিক ফাঁদে হত্যা করা হয়েছে হাতিটিকে।
গতকাল ৩০ নভেম্বর বিকেলে বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর ইউনিয়নের লটমনি পাহাড়ে হাতিটির মরদেহ দেখে স্থানীয়রা বন বিভাগে খবর দেন। মামলা দায়েরের পর ১ ডিসেম্বর, বুধবার সন্ধ্যায় প্রকাশ হয় ঘটনাটি।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) মো. সফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, পুরুষ হাতিটির আনুমানিক বয়স ২২ বছর। বৈদ্যুতিক শকে মৃত্যু হয়েছে হাতিটির। ঘটনাস্থলে এ সংক্রান্ত আলামতও পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত শেষে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে মৃতহাতিকে। হত্যার অভিযোগে চারজনের বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে গত ৬ নভেম্বর সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নে ধানক্ষেতে বৈদ্যুতিক ফাঁদে একটি হাতি হত্যার শিকার হয়। সবশেষ ১২ নভেম্বর বাঁশখালীর পূর্ব জঙ্গল চাম্বলে ধানক্ষেত থেকে একটি হাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। অসুস্থতাজনিত কারণে সেটির মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছিল বন বিভাগ। এটিও চট্টগ্রাম জেলায় তিনটি হাতির মৃত্যু হলো।

এক মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও শেরপুরে মৃত্যু হয়েছে মোট আটটি হাতি। এরমধ্যে সাতটি হাতি বিদ্যুতের ফাঁদ ও গুলি করে হত্যার অভিযোগে মামলা করেছে বন বিভাগ।
গত ২২ নভেম্বর হাতি হত্যা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বন বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। কিন্তু এরমধ্যেই হাতি হত্যার এই ঘটনায় বন বিভাগের কঠোর পদক্ষেপ নিতে না পারাকে দুষছেন সংরক্ষণকর্মীরা।
প্রাণ-প্রকৃতি বিষয়ক সাংবাদিক হোসেন সোহেল বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলেন, পর পর ২৫ দিনে আটটি হাতি মারা গেল। সম্প্রতি তিনটি হাতি হত্যার পর মাটিচাপা দেয়ার সময় জানাজানি হয়। এ বছরের ঘটনাগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে যে গেল বছরগুলোতেও হাতি হত্যা করে মাটি চাপা দিয়ে গুম করে দেয়া হতো। অনেক আগে থেকে এ বিষয়টি আমলে নিলে এ ঘটনাগুলো ঘটতো না। এতো বড় একটা দেহের হাতি হত্যা রাতারাতি গুম করে দেয়া হচ্ছে, তার মানে শুধু মানুষই নয় হাতিও গুম হয়।
“বন বিভাগের ভেতর পরিষ্কার জবাবদিহিতা না থাকার কারণে দিনের পর দিন হাতির মতো প্রাণী হত্যার ঘটনা ঘটছে। এই যে বড় বা ছোট প্রাণী মারা যাচ্ছে ও বন দখল বা উজাড় হচ্ছে, এই সমস্ত ক্ষেত্রে কেন মিডিয়া বা জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে না বন বিভাগ। এই জবাবদিহিতার জায়গাটা যতক্ষণ না পরিষ্কার বা স্বচ্ছ্ব হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে,” যোগ করে হোসেন সোহেল।