
বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বন্যহাতি চলাচলের জন্য চিহ্নিত ১২টি করিডোর সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছে উচ্চ আদালতে। রিটে করিডোরগুলোকে সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে গেজেটভুক্ত করতেও আদেশ চাওয়া হয়েছে। রোববার হাইকোর্টের সংশ্নিষ্ট শাখায় বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা আদনান আজাদ, ফারজানা ইয়াসমিন ও খান ফাতিম হাসান জনস্বার্থে রিটটি করেন। আদালতে রিটটি দাখিল করেছেন ব্যারিস্টার খান খালিদ আদনান। রিটে বেঙ্গল ডিসকাভারের পক্ষে সার্বিক সহযোগিতা করেন বন্যপ্রাণী বিষয়ক সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম মিঠু।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রিটটি শুনানির জন্য দাখিল করা হয়েছে। ওই বেঞ্চের কার্যতালিকা অনুসারে চলতি সপ্তাহে এ রিটের শুনানি হতে পারে। রিটে বিবাদী করা হয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন সচিব, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষকসহ ২০ জনকে।
রিটে বন অধিদপ্তর চিহ্নিত হাতি চলাচলের জন্য নির্ধারিত ১২টি করিডোরকে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ মোতাবেক সরকারি গেজেট দ্বারা সংরক্ষিত করিডোর হিসেবে ঘোষণা না করা এবং এ কারণে ক্রমাগত হাতি হত্যার ঘটনা ঘটার জন্য বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- সে মর্মে রুল জারিরও আদেশ চাওয়া হয়েছে।
ব্যারিস্টার খান খালিদ আদনান বলেন, “চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মেরে ফেলা হচ্ছে বন্যহাতি। হাতি হত্যা বন্ধে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে এবং রুল জারির আর্জিও পেশ করা হয়েছে। করিডোর সংরক্ষণ না করায় মানুষ সেখানে ঘরবাড়ি তৈরি করছে। হাতি চলাচলের পথে বাধা পেয়ে ওইসব ঘর-বাড়ি ভেঙে দিয়ে যাচ্ছে। এতে মানুষ আর হাতির মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। আর এ কারণেই হাতি মেরে ফেলা হচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ এই ছয় বছরে দেশে মৃত্যু হয়েছে মোট ৭৬টি বুনো হাতির। তবে প্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গত দুই বছরেই মারা গেছে ৪০টি বন্যহাতি। এরমধ্যে ২০২০ সালে ২২টি ও ২০২১ সালের সাড়ে ১০ মাসে ১৮টি। চলতি মাসে মারা গেছে সাতটি বন্যহাতি।
আইইউসিএন জরিপ অনুযায়ী, ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বন্যহাতির সংখ্যা ছিল ২৬৮টি। এ ছাড়া ব্যক্তিমালিকানাধীন ৮২টি, চিড়িয়াখানায় তিনটি ও দেশের দুটি সাফারি পার্কে ১১টি হাতি রয়েছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে কিছু হাতির প্রজনন হয়েছে বলে মনে করেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। এমন প্রেক্ষাপটে রোববার বেঙ্গল ডিসকাভারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে হাতির করিডোর রক্ষায় রিটটি করা হয় উচ্চ আদালতে।