
ডিম ফুটে বের হওয়ার পরপরই কামড় দিতে চেষ্টা করে ছানা।বিশ্বের অন্যতম পুরনো প্রাণী কুমির, এরা জন্মের শুরুতেই নিজ হিংস্রতাকেই জানান দিয়েই আসে পৃথিবীর আলোতে।
বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফ জানান, অন্য হিংস্রপ্রাণী একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিজ বাবা-মায়ের সঙ্গে থেকে শিখে নেয় শিকারের কলা কৌশল।
“তবে এক্ষেত্রে বিচিত্র কুমির…শক্তিশালী কামড় দিয়ে শিকার ধরতে অভ্যস্থ কুমির কামড় দেয়ার কৌশল আয়ত্ব করে ডিমের ভেতরেই,” বলেন এই গবেষক।
এই গবেষকের কথার প্রমাণও মিললো বাংলাদেশের বান্দরবানের উখিয়ায় অবস্থিত কুমির খামার ও প্রজনন কেন্দ্রেই। যেখানে ডিম থেকে কৃত্রিম পদ্ধতিতে ইনকিউবেটরে ফোটানো হয় কুমির ছানা।

দেখা গেল, ডিমের খোশা অল্প ছাড়িয়ে দিতেই সবে মাত্র মুখ বেরিয়েছে, এরমধ্যেই একের পর এক কামড় দেয়ার চেষ্টা চলছে বাচ্চা কুমিরের।
গবেষক জানান, সদ্য জন্ম নেয়া কুমিরের কামড় এতই শক্তিশালী নিমিষেই ক্ষত–বিক্ষত করে দিতে পারে একজন মানুষের আঙ্গুল।ডিমের ভিতর থেকেই এরা খুব শক্ত দাঁত আর চোয়াল নিয়ে বের হয়।
“কুমির এমন একটি প্রাণী যেটির লিঙ্গ বিভেদের সেক্স ক্রোমোজোম নেই। ডিম থেকে বাচ্চা পুরুষ নাকি স্ত্রী হবে তা পুরোপুরি নির্ভর করে তাপমাত্রার উপরে,” উল্লেখ করেন গবেষক।
গবেষক জানান, মূলত গর্তে থাকা ডিমের মধ্যে যেগুলো তাপ বেশি পায়, তা পুরুষ আর তাপ কম পাওয়াগুলো হয় স্ত্রী কুমির।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ বাচ্চাই ডিম থেকে নিজে বের হতে পারে না, তবে ডিমের ভেতর থেকেই ডাক দিতে পারে।

“৮৫ দিন পার হবার পর যখন ২/৩ টা ডিম থেকে বাচ্চা বের হতে শুরু করে, মা কুমির তখন ডিমের ভেতরের শব্দ শুনে ডিম ভেঙে বের করে বাচ্চা। ডিম ভাঙ্গার এই কামড়কে বলা হয় ‘জেন্ট্রাল-বাইট’,” জানান আদনান আজাদ।
জন্মের পরপরই বাচ্চা কুমির নিজ থেকেই খাবার সংগ্রহ করতে পারে। খাবারের তালিকায় সাধারণত পোকা মাকর ও ছোট মাছই প্রিয়।

গবেষক আসিফ জানান, “তবে বাণিজ্যিক কুমির চাষের ক্ষেত্রে ডিম ইনকিউবেটরে রাখা হয়। ৮০-৯০ দিনের মধ্যে বাচ্চা বের হয়, পুরুষ নাকি স্ত্রী হবে তা নির্ভর করে ইনকিউবেটরের তাপমাত্রার ওপরে।”
এক্ষেত্রে ঝুঁকিও থাকে ব্যাপক, কারণ পাহারারত থাকা মা কুমিরকে সরিয়ে ডিম ইনকিউবেটর নেয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
“কৌশলেই কুমিরকে তাড়াতে হয়, সামান্য ভুলেই কুমির আক্রমণে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে,” উল্লেখ করেন গবেষক আসিফ।
কুমিরের বেঁচে থাকার জন্য কামড় খুব জরুরি। প্রাপ্ত বয়স্ক একটি কুমিরের কামড়ে দশ টন চাপ সৃষ্টি করে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রায় ২০ কোটি বছর আগে ডাইনোসর যুগের প্রাণী কুমির। সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে ডাইনোসর বিলুপ্ত হলেও কুমির টিকে আছে বিবর্তিত ছাড়াই।