
করোনা মহামারি ঠেকাতে লকডাউনের জন্য বাংলাদেশের সুন্দরবনে এখন পর্যটক নিষিদ্ধ। পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ বনটিতে প্রবেশ নিষেধ জেলে ও মাওয়ালীদেরও। সরকার কর্তৃক দেশজুড়ে লকডাউন শুরুর পর থেকেই বনাঞ্চলের নদী ও খালে সবরকম ইঞ্জিন চালিত বোটের চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সুন্দরবনে নেই মানুষের বিচরণ, তাই বন্যপ্রাণীরাও নির্ভয়ে ঘুরছে বনের ভেতর। অবাধ চলাচল করতে পারায় তৃষ্ণা নিবারণে নদী ও খালে প্রাণীদের জল পান করতে দেখা যাচ্ছে।
অথচ একমাস আগেও সুন্দরবনে বাংলার বাঘের দেখা মেলা ছিল দুষ্কর। কিন্তু এখন বনবিভাগের রেঞ্জারদের চোখে প্রায়ই দেখা দিচ্ছে বাঘসহ বন্যপ্রাণী। এ বিষয়ে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
“লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে পূর্বের তুলনায় বেঙ্গল টাইগারস, চিত্রা হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর বিচরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাঘের সাথে বন রেঞ্জারদের খেলতেও দেখা যাচ্ছে,” উল্লেখ করেন বন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন। তবে যেসব স্থানে সাধারণত বাঘ ও মানুষের সংঘাত হয় সে জায়গাগুলোর সুরক্ষার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি তিনি।
২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালে মে পর্যন্ত বনবিভাগের জরিপে বাংলাদেশ অংশে ১১৪টি বাঘ পাওয়া যায়। ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে করা জরিপে ৭২টি বাঘ সনাক্ত হয়েছিল। এরমধ্যে ৬৩টি প্রাপ্তবয়স্ক, ১৪টি কিশোর এবং পাঁচটি ছিল বাঘের বাচ্চা। ২০১৮ সালের সুন্দরবনে দ্যা স্ট্যাটাস অফ টাইগারস ইন বাংলাদেশের তথ্য মতে, সনাক্ত হওয়া ৬৩টি প্রাপ্তবয়স্কদের বাঘের মধ্যে শুধু ৯টি ছিল পুরুষ, ৪৪টি নারী এবং অজ্ঞাত লিঙ্গের বাঘ ছিল ১০টি।
সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশির-আল-মামুন জানান, যদি প্রাকৃতিক বনের পরিবেশ এমনই রাখা যেত তবে বন্যপ্রাণীরা প্রজননের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ পেত। তবে নতুন শুমারি ছাড়া এখন বাঘের সংখ্যা বেড়েছে এটা বলা কঠিন।
শুধু বাংলাদেশ অংশেই নয় সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন শুরুর পর সুন্দরবনের ভারত অংশেও বাঘের দর্শন বেড়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির বাঘ সংরক্ষণ পরিচালক। দশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের সুন্দরবনে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ মিলে এখন রয়েছে প্রায় ২১০টি বাঘ।