রমরমা ব্যবসা: প্রকাশ্যে বিক্রি হরিণের মাংস!

লামা উপজেলায় শিকারের পর একটি বন্য হরিণের মাংস কাটার চিত্র।

বাংলাদেশের পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের লামা উপজেলায় কয়েকটি এলাকায় অবাধে বন্যপ্রাণী শিকার, পাচার এবং বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি এই কর্মকান্ডের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ করেন সংরক্ষণকর্মীরা। এতে পাহাড়ি বনাঞ্চলের বিচরণ করা বুনো হরিণ, বনমোরগ, মথুরা, সাপ, কচ্ছপ ও তক্ষকসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব সংকটে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, লামায় বন্যপ্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিকারের তালিকায় রয়েছে মায়া হরিণ। কতিপয় বনের প্রাণী শিকারী নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, দিনে উপজেলার কয়েকটি স্থান থেকে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫টি হরিণ শিকার করে বাণিজ্যিকভাবে এর মাংস বিক্রি করা হয়। অনেকে এখন বন্যপ্রাণী শিকারকে পেশা হিসেবেও নিয়েছেন।

২৯ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার দুপুরে লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব শিলেরতুয়ার ঠান্ডা ঝিরি নোয়াপাড়া এলাকার শাহেব আলীর ছেলে মো. বেলাল ও মো. মনা একটি মায়া হরিণ শিকার করে। এই দুই ব্যক্তি হরিণ জবাই ও মাংস কাটার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে। ছবিতে তাদের উল্লাস করতে দেখা যায়। শিকার করা ওই হরিণের মাংস কেজিপ্রতি ছয়শো টাকা করে বিক্রি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা জানান, নিয়মিত হরিণ ও বনমোরগ শিকারের মাংস বিক্রি করছে একটি সিন্ডিকেট। বন্যপ্রাণী শিকারের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে বনবিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা। রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবু তাহের বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। একসময় এই এলাকায় প্রচুর হরিণ দেখা গেলেও এখন দেখা যায় না। শিকারের কারণে মায়া হরিণ এখন বিলুপ্তির পথে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের শিলেরতুয়া, ২নং ওয়ার্ডের মাস্টার পাড়া, ৭নং ওয়ার্ডের ছোট কলার ঝিরি, জামালপুর পাড়া, ৮নং ওয়ার্ডের বড় কলারঝিরি, ৯নং ওয়ার্ডের নাইক্ষ্যংমুখ, আলিয়াং বাবু পাড়া, লামা সদর ইউনিয়নের বেগুনঝিরি, বরিশাল পাড়া, এম হোসেন পাড়া, পোপা, ঘিলা পাড়া, চিউনীমুখ, সরই ইউনিয়নের আন্ধারি জামালপুর পাড়া, আমতলী, ধূইল্ল্যা পাড়া, লেমুপালং, লুলাইং, গজালিয়া ইউনিয়নের তুলাতলী, চিন্তারব পাড়া, কোলাইক্কা পাড়া, বড় বমু, মিনঝিরি, ফাইতং ইউনিয়নের লম্বাখোলা, বদরটিলা, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের মিরিঞ্জা, গয়ালমারা, বনপুর, কাঁঠালছড়া এলাকা থেকে নিয়মিত শিকার করা হচ্ছে হরিণসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী।

লামা বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. নুরে আলম হাফিজ বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। শিগগিরই দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।