অবশেষে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছে বন্যহাতি ‘জামিলা’। গেল ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা ইউনিয়নের জামিলাবাগ এলাকায় পাল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কাদায় আটকে গুরুতর আহত হয়েছিল হাতিটি। কিন্তু পরবর্তীতে হাতির শারীরিক অবস্থা অবনতি হলেও উন্নত চিকিৎসার দেয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল বন বিভাগ।
এ নিয়ে গত ১১ মে ‘বন্যহাতির আকুতি,সিদ্ধান্তহীনতায় বন বিভাগ!’ শিরোনামে সংবাদ প্রচার করে বেঙ্গল ডিসকাভার। এর একদিন পরই উন্নত চিকিৎসার জন্য হাতি জামিলাকে ডুলাহাজারায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বন বিভাগ। ১৩ মে, শুক্রবার হাতিটি সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে বেঙ্গল ডিসকাভার-কে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম।
তিনি বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলেন, “গতকাল ১২ মে সিদ্ধান্ত হয় যে হাতিটির জীবন রক্ষায় সব রকম চেষ্টা করা হবে। এদিন রাত থেকেই অবশ্য হাতিটিকে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়। কিন্তু রাতে হাতির পাল পাশ্ববর্তী পাহাড়ে অবস্থান নেয়ায় হাতিটিকে ট্রাকে তোলা সম্ভব হয়নি। পরে আজ সকালে হাতিকে ট্রাকে করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কে পাঠোনো হয়।
“উদ্ধারের পর হাতিটিকে সাড়ে ছয় হাজার লিটার স্যালাইন দেয়া হয়েছিল। যাতে হাতির শারীরিক দুর্বলতা কাটে। আমরা আশা করছি, সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী চিকিৎসকদের সেবায় হাতিটি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। এরপর এটির শারীরিক অবস্থা ও আচরণ বুঝে তাকে বনে ফেরত পাঠানো হবে নাকি সাফারি পার্কেই অন্য হাতিদের সঙ্গে রাখা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে,” যোগ করেন সফিকুল ইসলাম।
বন বিভাগ জানায়, আনুমানিক ১০-১২ বছর বয়সী বুনো হাতিটি উদ্ধারের পর কোন খাবার খেতে পারছিল না। হাতির জীবন বাঁচাতে সরেজমিনে হাতির শারীরিক অবস্থা পরিদর্শনও করেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এর আগে গেল ১০ মে বন্যহাতি ‘জামিলা’র শারীরিক অবস্থা জানিয়ে বন অধিদপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কোদলা বন বিট অফিস।
ফরেস্টার নবীন কুমার ধর স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, “উদ্ধারের পর হাতিটিকে কলা গাছ, বরবটি, ধান গাছ,আনারস,পাকা কলা,ঘাস ও লতাপাতাসহ সরবরাহ করা পানি নিজ শুঁড় দিয়ে গ্রহণ করেছিল হাতিটি। কিন্তু পরবর্তীতে খাবার গ্রহণ ও পানি পান করা থেকে বিরত রয়েছে হাতি জামিলা এবং প্রতিনিয়ত স্বল্প পরিসরে বৃত্তকারে ঘুরছে। তাই বন্য এই হাতির জীবন রক্ষায় বিশেষজ্ঞ প্রাণীবিদ ও চিকিসৎকদের সমন্বয়ে দ্রুত মেডিকেল টিম গঠন করে অনতিবিলম্বে হাতিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজন।“
প্রাণী চিকিৎসকরা জানান, উদ্ধারের পর হাতির পিঠে থাকা ক্ষতে পোকা ছিল। সাম্প্রতিক চিকিৎসায় তা সেরেছে ও ক্ষত শুকিয়েছে। আর খাবার না খাওয়ায় এ কদিন স্যালাইন প্রয়োগ করা হয়েছিল। এতে কিছু শক্তি পেয়ে অল্প চলাফেরা করলেও গত কয়েকদিন ধরে কোন খাবার এমনকি পানিও মুখে তুলতে পারছে না বন্যহাতি জামিলা।