
সম্প্রতি বাংলাদেশের মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানার একজন প্রাণী চিকিৎসক কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তবে ১৪ দিন চিকিৎসা শেষে ভাইরাস মুক্ত হয়ে সুস্থ হন ওই প্রাণী চিকিৎসক। তবে ওই কর্মকর্তার করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে প্রাণীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং চিড়িয়াখানার নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রাণীবিদরা। তারা বলছেন, চিড়িয়াখানায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপদ না থাকলে কোভিড-১৯ এর ঝুঁকিতে পড়বে জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রাণীরা।
জানা গেছে, গেল মে মাসের শেষ দিকে জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রাণী চিকিৎসক নাজমুল হুদার শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস শনাক্ত হয়। তবে ১৪ দিন চিকিৎসা নেয়ার পর গতকাল ৬ মে তার শরীরে দ্বিতীয় করা কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়টি পোস্ট করে চিড়িয়াখানার প্রাণী চিকিৎসক নাজমুল হুদা জানান, ”সর্বশক্তিমান আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি লক্ষণ শুরুর ১৪ দিন পর কোভিড-১৯ মুক্ত হয়েছি। দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় নেগেটিভ রেজাল্ট পাওয়ার পর চিকিৎসকরা ৭ মে আমাকে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। আগামী ৮ মে কর্মস্থলে (চিড়িয়াখানায়) যোগদান করারও আশাবাদ ব্যক্ত করেন নাজমুল হুদা।
বেঙ্গল ডিসকাভার-কে নাজমুল হুদা বলেন, ”আমি এখন সুস্থ আছি। কোন মাধ্যম থেকে আমি আক্রান্ত হয়েছি তা এখনো জানা যায়নি। তবে কোন প্রাণী আক্রান্ত হতে পারে এমন কোন চিন্তার কারণ নেই,” উল্লেখ করেন তিনি। এ মুহুর্তে মিরপুর চিড়িয়াখানার প্রাণীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হবে না বলেও জানান নাজমুল হুদা।
এদিকে প্রাণী চিকিৎসকের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে চিড়িয়াখানায় বন্দী প্রাণীদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রাণীবিদ ও প্রাণী সংরক্ষণ কর্মীরা। প্রাণীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মিরপুর চিড়িয়াখানার বাঘ-সিংহসহ বিড়াল প্রজাতির প্রাণী এবং সকল কর্মীদের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষাসহ নিয়মিত জীবানুমুক্ত রাখতে উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা।
চাইনিজ একাডেমি অব সাইন্সের বন্যপ্রাণী গবেষক নাসির উদ্দিন বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলেন বলেন, “চিড়িয়াখানায় প্রাণীর সংস্পর্শে আসা যেকোন ব্যক্তির করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়টা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। কাজেই প্রাণী স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি আক্রান্তের ১৪ দিন পূর্ব পর্যন্ত কোন কোন প্রাণীর সংস্পর্শে এসেছিলেন তা চিহ্নিত করে সেসব প্রাণীর স্বাস্থ্য গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তবে কোন প্রাণী আক্রান্ত হলে কী করণীয় তাও আগেভাগেই নির্ধারণ করে রাখতে হবে।“
“শ্বাসতন্ত্রের কোষে করোনা ভাইরাস প্রবেশের জন্য এনজিউটেন্সিনোজেন কনভার্টিং এনজাইম নামক এক ধরণের বিশেষ রিসেপ্টর দরকার হয়। বাঘ, সিংহ ও অন্যান্য বিড়াল গোত্রের প্রাণীর এনজিউটেন্সিনোজেন কনভার্টিং এনজাইম এবং মানুষের এনজিউটেন্সিনোজেন কনভার্টিং এনজাইমের গঠন ও কাজ প্রায় একই ধরনের। তাই মানুষ থেকে কোভিড-১৯ ভাইরাস সহজেই বিড়াল জাতীয় প্রাণীর দেহে যেতে পারে,” যোগ করেন নাসির উদ্দিন।
বাংলাদেশের প্রাণী কল্যাণ সংস্থা ’প’ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলেন, চিড়িয়াখানার প্রাণীদের দৈনন্দিন পরিচর্যা এবং খাদ্য সরবরাহের জন্য প্রচুর সরবরাহকারীর আগমন ঘটে প্রতিদিন। এদের বিভিন্নজন বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে। চিড়িয়াখানার ভিতর এদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে। যদিও মানুষ থেকে বিড়াল, বাঘ বা অন্য কোন প্রাণী সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা খুবই নগন্য। তবুও সাবধান থাকতে হবে যেন চিড়িয়াখানায় আটককৃত প্রাণীকুল এবং তাদের পরিচর্যাকারীরা নিরাপদে থাকেন। নতুবা ভীতসন্ত্রস্ত কর্মীরা প্রাণীদের পরিচর্যায় অবহেলা করতে পারেন।”
গত এপ্রিল মাসে আমেরিকার ব্রুনস চিড়িয়াখানার বিড়াল প্রজাতির আটটি প্রাণীর দেহে করোন ভাইরাস পাওয়া যায়। একই মাসে নিউইয়র্কেও দু’টি বিড়ালের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। গত মার্চেও হংকংয়ে পালিত দু’টি জার্মান শেপার্ড কুকুর এবং বেলজিয়ামে একটি বিড়াল কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া খবর দিয়েছিল ন্যাশানাল জিওগ্রাফী। প্রাণী রক্ষণাবেক্ষণে থাকা কর্মী থেকে বিড়াল প্রজাতির প্রাণীরা সংক্রমিত হয়েছিল বলে জানিয়েছিল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
এরপর থেকেই চিড়িয়াখানায় করোনার বিস্তার ঠেকাতে দর্শনার্থী নিষিদ্ধ করে বিশ্বের অনেক দেশ। বাংলাদেশ ও ভারতের চিড়িয়াখানার প্রাণী ও কর্মীদের সুরক্ষায় নেয়া হয়েছিল বিশেষ ব্যবস্থা। কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানার চিকিৎসকের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর উদ্বিগ্ন করেছে বাংলাদেশের প্রাণী সংরক্ষণকর্মীদের। তাই করোনা পরীক্ষা করে জাতীয় চিড়িয়াখানাটির প্রাণীদের সুরক্ষিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।