বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে বন্যহাতি। ১৩ দিনের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ছয়টি বুনো হাতি। আর গেল ২২ মাসে হত্যার শিকার হয়েছে ৩৬টি হাতি। যেগুলোর বেশিরভাগকেই হত্যা করা হয় গুলি করে, জমিতে বিষ মিশিয়ে এবং বৈদুতিক ফাঁদ পেতে। বন্যহাতি হত্যার ঘটনায় সমাবেশ, মানববন্ধন, পাপেট শো এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ করছেন বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক সমাজ।
হাতির আবাস নিরাপদ করতে প্রশাসনকে উদ্যেগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি হাতি হত্যার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনারও দাবি জানানো হচ্ছে। একইসঙ্গে বনবিভাগের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন প্রতিবাদকারীরা। হাতি হত্যা বন্ধ করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পদত্যাগও দাবি করছেন তারা। পাশাপাশি হাতি সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন প্রতিবাদকারীরা।
সেইভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশের সভাপতি মোয়াজ্জেম রিয়াদ ফেসবুকে লিখেছেন, “আজ দেশের বনভূমির সজ্ঞা পাল্টে ফেলেছে বনবিভাগ। বন্যপ্রাণীর বিচরণ ক্ষেত্রে পেপে, তরমুজ, লাউ, শশা, বেগুন, বাওকুল, পানবরজ করবেন আর তার আশেপাশে বন্যপ্রাণী দেখলে গুলি করে মারবেন, বন্যপ্রাণীর বংশসহ বিষ মাখায়ে মারবেন তার নাম বনভূমি হতে পারে না। বন্যপ্রাণীর বাসস্থলসমূহকে প্রাকৃতিক বন সৃষ্টির মাধ্যমে সংরক্ষিত অঞ্চল ঘোষণার দাবীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্বারকলিপি দিবে সেইভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশ।”
গবেষক আদনান আজাদ আসিফ ফেসবুকে লিখেছেন, “হাতির কান্না দেখার যেন কেউ নেই! হত্যা, হামলা, বাসস্থান উজাড় এসবের জন্য হাতির অস্তিত্ব এখন সঙ্কটের মুখে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাপেট শো ও মানববন্ধনের আয়োজক মাহফুজুর রহমান বলেন, “একটি হাতিকে প্রজননক্ষম হতে ৮ বছর সময় লাগে এবং বাচ্চা প্রসব করতে ২২ মাস সময় লাগে। অথচ দেশের বিভিন্ন স্থানে বুনো হাতি হত্যা করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে প্রায় পাঁচটি হাতি মৃত শনাক্ত করা হয়েছে। একটি বিপন্ন প্রজাতিকে হত্যা ও নির্যাতন করতে থাকলে কিছুদিন পর আর জীবন্ত হাতি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমাদের সন্তানদের পাপেট শো-সিনেমা দেখে হাতি চিনতে হবে।”
বন্যপ্রাণী বিষয়ক সাংবাদিক হোসেন সোহেল ফেসবুকে লিখেন, “শুক্রবার সারাদেশে যখন হাতি হত্যার প্রতিবাদ চলছে তখন আরও একটি হাতির হত্যাকান্ডে বনবিভাগ এখন সরাসরি প্রশ্নবিদ্ধ! এসব হাতি হত্যার দায় বনবিভাগের। যদিও তাদের কোন জবাবদিহিতা নেই। এমন কি নেই কোন মামলা ও হত্যাকারীদের আটকও নেই। যদিও গত ১১ নভেম্বর শেরপুরের বালিজুড়ি হাতি হত্যার ঘটনায় নেচার এক্টিভিষ্টদের প্রতিবাদে চাপাচাপিতে একটি মামলা হয়েছিল কিন্তু কোন গ্রেফতার নেই।”
নাসির আহমেদ নামের একজন লিখেন, “খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়টা প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা খুবই জরুরি।”
বন্যপ্রাণী বিষয়ক সাংবাদিক আমিনুল মিঠু লিখেছেন, “আজও শেরপুরে হত্যার শিকার হলো বুনো হাতি। এ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে ৬টি ও সাড়ে ১০ মাসে ১৭টি। হাতির বিচরণক্ষেত্র কেন নিরাপদ করা হচ্ছে না এখনো? বনবিভাগের কর্মকর্তারা এখনো কিভাবে ঘুমিয়ে আছে? ময়নাতদন্ত, মামলা করে আর কতো দায়িত্ব পালন করবে? হাতি নি:শেষ হওয়ার জন্য কি অপেক্ষা? বন্যপ্রাণী রক্ষা করতে না পারলে বন কর্তাদের পদত্যাগ দাবি করছি।”