বানরের মুখে মাস্ক, প্রাণী সুরক্ষায় শঙ্কা!

বাংলাদেশের বান্দরবানের পাহাড়ে মানুষের ফেলা দেয়া মাস্ক নিয়ে খেলা করছে একটি বানর। ছবি: আদনান আজাদ আসিফ, বন্যপ্রাণী গবেষক।

বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার নীলাচল পাহাড়, যেখানে দিনে কয়েকশত পর্যটক আনাগোনা করে থাকেন। পাহাড়টিতে পর্যটকদের ফেলা দেয়া ব্যবহৃত মাস্ক একটি বানর কুড়িয়ে নিয়ে ঠিক মানুষের মত করেই তা ব্যবহারের চেষ্টা করছিল, কিছুক্ষণ চেষ্টার পর মাস্কটি নিয়েই বনের ভেতর চলে যায় বানরটি। অল্প সময়ের মধ্যেই এ চিত্র ক্যামেরাবন্দী করেন বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফ। বেঙ্গল ডিসকাভার-কে ছবির ঘটনাটি জানিয়ে বর্তমান কোভিড পরিস্থিতেতে বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

মূলত দেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়ার পর থেকেই ভাইরাসটি থেকে সুরক্ষা পেতে ব্যবহৃত মাস্ক যত্রতত্র ফেলছেন অনেকেই। বিশেষ করে প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলের কাছাকাছি গড়ে ওঠা পর্যটন স্পটগুলোতে এ চিত্র এখন নিত্যদিনের ঘটনা বলা চলে। সম্প্রতি বান্দরবানের পর্যটন এলাকায় আদনান আজাদ আসিফের তোলা ছবির ঘটনাটি দেখে বন্যপ্রাণী সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত প্রাণীবিদরা। এ নিয়ে প্রাণীবিদ, প্রাণী চিকিসক, গবেষকসহ বনবিভাগের কর্মকর্তাদের মতামত সংগ্রহ করে বেঙ্গল ডিসকাভার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের ফেলে দেয়া মাস্ক কোন প্রাণী ব্যবহার করলে সেটি থেকে প্রাণীরাও যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে তেমনি এমন অসচেতনতার কারণে ক্ষতিটাও বেশ ভোগাবে মানবজাতিকেই।

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মনিরুল হাসান খান বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলেন, “বানর, হনুমান কিংবা উল্লুকের মত প্রাণীদের জন্য এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মানুষ যেসব জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় সেসব জীবাণু দ্বারা এদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। তবে ভিন্ন প্রজাতীর প্রাণী যেমন সরীসৃপের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা কম।”

“মানুষের ব্যবহৃত কোন জিনিসই খোলা জায়গায় ফেলে আসা উচিত না। এটি পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীর জন্য যেমন ঝুঁকিপূর্ণ তেমনি আইনবিরোধীও বটে। এ ব্যাপারে পর্যটকদের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন,” উল্লেখ করেন মনিরুল হাসান খান।

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রাণী চিকিৎসক ডা. নাজমুল হুদা বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলেন, “যিনি মাস্ক পরিবেশে ফেলছেন তিনি যদি মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলসিস (টিবি) আক্রান্ত থাকেন তার মাস্কে টিবি রোগের জীবাণু থাকবে। কারণ টিবি’র এরোসল ট্রান্সমিশন হয় এবং ইনফেকশন ডোজ খুব কম। আক্রান্ত ব্যক্তির মাস্ক যদি প্রাইমেটস এর কোন প্রজাতি মুখে পরে বা লাগায় তাহলে টিবিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”

বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের প্রধান জহির উদ্দিন আকন বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলেন, “একটা মাস্ক যে শুধু কাউকে বাইরের কোন জীবাণু থেকে রক্ষা করে বিষয়টি এমন না, বরং নিজের শরীরের কোন জীবাণুও যেন বাইরে না ছড়ায় এটিও নিশ্চিত করে। সে হিসেবে একটা ব্যবহৃত মাস্কের দু’পাশেই যে আসলে কত ধরণের জীবাণু থাকতে পারে তার ইয়ত্তা নেই।”“সব প্রাণীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সমান হয় না। যেসব প্রাণীর এই ক্ষমতা কম তারা খুব সহজেই ফেলে দেয়া মাস্কের মাধ্যমে মানববাহিত যেকোন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আর একবার যদি কোন প্রজাতির মধ্যে ভাইরাসজনিত কোন রোগ ছড়িয়ে যায় তাহলে সেটি জীববৈচিত্রের যেমন ক্ষতি করবে তেমনি মানুষের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে,” মন্তব্য বন কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আকন।

বনবিভাগের পক্ষ থেকে পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের মাস্ক ব্যবহারজনিত সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ”এলাকাভেদে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ ফেলে আসা মাস্ক সংগ্রহ করে সেগুলোকে যথাযথভাবে নষ্ট করে ফেলে।”

উল্লেখ্য, যেকোন ক্ষতিকর ভাইরাস বা স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় প্রকৃতি, মানুষ ও প্রাণীয় সুরক্ষায় মানুষকে বেশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে পর্যটকদের মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভসসহ ব্যবহার্য জিনিষপত্র প্রাকৃতিক পর্যটনকেন্দ্র ও বন্যপ্রাণীর বিচরণ এলাকায় ফেলার ক্ষেত্রে সতর্কও থাকতে বলেছেন তারা।