বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানায় গত ২৬ মে জন্ম নিয়েছিল দুটি বেঙ্গল টাইগারের শাবক। গেল ১৬ আগস্ট ঘটা করে জন্মনিবন্ধন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শাবক দুটির নাম ’দুর্জয় ও অবন্তিকা’ রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। কিন্তু জন্মের প্রায় ছয় মাস মধ্যেই মারা গেছে বাঘ শাবক দুটি। চিড়িয়াখানায় বেঙ্গল টাইগার দম্পতি টগর ও বেলির ঘরে জন্ম নিয়েছিল ছেলে শাবক দুর্জয় আর মেয়ে শাবক অবন্তিকা।
জানা গেছে, গত ২১ নভেম্বর বাঘ শাবক দুটির মারা যায়। কিন্তু বিষয়টি এতদিন গোপনই করেছিল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। ২৭ নভেম্বর সাংবাদিকরা খোঁজ পেয়ে জানতে চাইলে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. আব্দুল লতিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ১৫ নভেম্বর বাঘের দুই শাবকের অসুস্থতা ধরা পড়ে। তারা পেছনের পা খুঁড়িয়ে হাটছিল। এ অবস্থায় চিকিৎসা শুরু করে চিড়িয়াখানা মেডিকেল বোর্ড। রক্ত পরীক্ষায় মাছিবাহিত রক্তের পরজীবী ধরা পড়ে। সে অনুযায়ী চিকিৎসাও চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঘ শাবক দুটিকে বাঁচানো যায়নি।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন মতে, সেটসি ফ্লাই নামে এক ধরনের মাছির কামড়ে ট্রাইপেনোসোমা রোগে মৃত্যু হয় শাবক দুটির। তবে এ খবর বা কোনো ছবি দেয়নি কর্তৃপক্ষ। গবেষকরা বলছেন, অদক্ষ চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা ও অযত্ন-অবহেলাই এই মৃত্যুর কারণ। এভাবে চললে চিড়িয়াখানায় কোনো বাঘ শাবকই বাঁচানো যাবে না।
ড. আব্দুল লতিফ বলেন, ”যেখানে বাতাস ঢুকতে পারে সেখানে মশা-মাছি প্রবেশ করতে পারে। এটি একটি বড় সমস্যা। মাছি নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন।” যে রোগে বাঘ ছানা দুটি আক্রান্ত হয়েছিল, সেটিকে মানব শরীরের ডেঙ্গুর সঙ্গেও তুলনা করেন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, বাঘ শাবক দুটিকে হাসপাতালে না নিয়ে চিড়িয়খানার খাঁচায় রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। এতে অসুস্থ হওয়ার দশদিনের মধ্যেই মারা যায় শাবক দুটি। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চিড়িয়াখানায় প্রথম বাঘের বাচ্চা জন্ম নেয় ১৯৯০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। গত ২৬ মে দুর্জয় আর অবন্তিকাসহ এই পর্যন্ত ৪০টি বাঘের বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে ট্রাইপেনোসোমায় আরেকটি বাঘ শাবক মারা গিয়েছিল।
মৃত্যুর আগে মা বেলীর সঙ্গে থাকত দুর্জয় ও অবন্তিকা। তাই মাছিবাহিত রোগে ছানা দুটির মৃত্যুর পর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে মা বাঘটিকেও। পরিচালক ডা. আবদুল লতিফ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শিগগিরই চিড়িয়াখানায় নতুন ব্যাঘ্র শাবক যুক্ত হবে। তবে এখনই বিস্তারিত কিছু জানাতে চাননি তিনি।