যেভাবে বাংলাদেশ থেকে কুকুর পাচার হয় (ভিডিও)

বাংলাদেশ থেকে ভারতে কুকুর পাচারের মুহুর্তে।ছবি: সামির মল্লিক, সাংবাদিক, বাংলাদেশ

পাহাড়ি পথে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশি কুকুর ধরে পাচার হচ্ছে ভারতের মিজোরামে। দেশের বিভিন্ন স্থান, পাহাড়ি লোকালয় বা হাট থেকে কুকুর ধরে নিয়ে মিজোরামের বিক্রির অভিযোগ উঠছে। গেল নভেম্বরে মিজোরামের পাঁচ কুকুর শিকারিকে ৩৫টি কুকুর খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা হয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এরপর তা ফেসবুকে পোস্ট করলে তা মুহুর্তে ছড়িয়ে পড়ে। এতে প্রাণীপ্রেমীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, প্রতি মাসেই পাহাড়ি হাট থেকে কুকুর ধরে নিচ্ছে শিকারিরা। কুকুর ধরে নেয়ার পদ্ধতিটি খুবই অমানবিকও। প্রথমে সরু তার দিয়ে কুকুরের মুখ বেঁধে দেয়া হয়। এরপর গলায় আটকে দেয়া হয় শুকনো বাঁশ। মূলত খাওয়ার জন্য কুকুর নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানা গেছে। আর মিজোরামের বাজারে একেকটি কুকুর বেচা হয় ছয় থেকে সাত হাজার টাকায়।

জানা গেছে, খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার, বাবুছড়া, থানা বাজার থেকে কুকুর নিয়ে যাওয়া রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মিজোরাম থেকে আসা শিকারিরা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কুকুর ধরে। দীঘিনালার বাবুছড়া বাজার থেকে কুকুর শিকার করা হয়। পরে গাড়ি ভাড়া করে রাঙামাটির মাইনী বাজারে নিয়ে যাওয়া হয় কুকুরগুলোকে। মাইনী থেকে কাপ্তাই হ্রদ হয়ে কুকুরের চালান যায় মিজোরামে। গাড়িতে গাদাগাদি করে তোলা হয় কুকুরগুলোকে।

মিজোরামে কুকুর বিকিকিনি নিষিদ্ধ করেছে সে দেশের আদালত। তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না কুকুর পাচার। কুকুরসহ যেকোন প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন প্রাণীপ্রেমীরা। খাগড়াছড়ির স্থানীয় তরুণ প্রাণীপ্রেমীরা অপু চৌধুরী বলেন, প্রভুভক্ত প্রাণীর মধ্যে অন্যতম কুকুর। কিন্তু প্রায়ই আমানবিকভাবে কুকুর শিকার হচ্ছে। এসব বন্ধে প্রশাসনের নজর দেয়া উচিত।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, ২০১২ (২০১২ সনে ৩০ নং আইন) অনুযায়ী, বাংলাদেশে কোন কারণ ব্যতিত মালিকবিহীন কোন প্রাণী নিধন বা অপসারণ করা যাবে না। এমনকি ব্যক্তি মালিকবিহীন কোন প্রাণী নিধন বা অপসারণ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

ঢাকাভিত্তিক প্রাণী কল্যাণমূলক সংগঠন প’ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা রাকিবুল হক এমিল বলেন, “প্রাণীকল্যাণ আইন ২০১৯ মতেও মালিকবিহীন কুকুর হত্যা বা অপসারণ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এজন্য সাজা ৬ মাস জেল এবং ১০,০০০ টাকা জরিমানা।”

এমিল অভিযোগ করেন, “গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, খাগডাছড়ি ও বান্দরবানের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় শত শত মালিকবিহীন পথকুকুর ধরিয়ে দেয়া হয়। এই কুকুরগুলোর শেষ গন্তব্য ভারতে মিজোরাম রাজ্যে। অথচ সেখানে কুকুরের মাংস বেচাকেনায় আইনি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।”

তিনি জানান, ২০১৮ সালে ৯ জুন মিজোরামে কুকুরের মাংস বিক্রেতারা ব্যবসার অনুমতি চেয়ে একটি রিট করে তা বাতিল করে আইজলের বিভাগীয় আদালত। পাশাপাশি দুই ট্রাক কুকুর জব্দ এবং আটক করে। পরবর্তীতে কুকুরগুলোর দায়িত্ব নেয় আন্তর্জাতিক প্রাণীকল্যাণ সংস্থা হিউম্যান সোসাইটি, ইন্ডিয়া।

“বাংলাদেশে প্রাণীকল্যাণ আইন ২০১৯ পাস হবার পর মালিকবিহীন প্রাণী তথা কুকুরও দেশের প্রাণ বৈচিত্রের জন্য সম্পদ। তাই কুকুর পাচার বন্ধ করতে হবে,” উল্লেখ করেন এমিল।

এদিকে দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, “কোন শিকারি সম্পর্কে সুনিদিষ্ট তথ্য পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব।”

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস এই ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে জানান, “কোন প্রাণীর সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করা যাবে না। এই বিষয়টি আমরা তদারকি করছি।”