
মানুষের প্রাণ-প্রকৃতি বিরোধী কর্মকাণ্ড ও জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে গত দুই শতকে বিশ্বে টিকে থাকার মতো অভিযোজন ক্ষমতা হারায় বেশ কিছু প্রাণী। আরো অনেক প্রাণীও এখন অস্তিত্ব সংকটের মুখে। ইতিমধ্যে চিরতরে বিলুপ্ত হয়েছে ৯টি ভিন্ন ধরনের প্রাণী।
এগুলো হলো- দক্ষিণ আফ্রিকান কোয়াগা জেব্রা, তাসমানিয়ান টাইগার, প্যাসেঞ্জার পায়রা, সিরিয়ার বন্য গাধা, পাইরিনিয়ান আইবেক্স, হিথ হেন, গোল্ডেন টোড ব্যাঙ, বাইজি ডলফিন এবং ইন্দোনেশিয়ান জাভা টাইগার।
কোয়াগা ও বাইজি ডলফিন ডলফিন
দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের একটি বিশেষ প্রজাতির জেব্রা। ১৮৭০ সালে বিলুপ্ত হয়ে যায় বন্য জেব্রাটির প্রজাতি। তবে আমস্টারডামের একটি চিড়িয়াখানায় থাকা সেটিও মারা যায় ১৮৮৩ সালে ১২ আগস্টে। জেব্রার মতই মুখ, ঘাড়ে সাদা ডোরাকাটা দাগ এবং ঘাড়ে কেশর ছিল। এদের পেটের ও পায়ের চামড়ার রং ছিল পুরোপুরি সাদা। উনবিংশ শতাব্দিতে ডাচ উপনিবেশকরা মাংস ও চামড়ার লোভে নির্বিচারে হত্যা করে এই বন্যপ্রাণীটিকে।

চীনে ‘গডেস অব ইয়াংসি’ বলে খ্যাত বিশেষ প্রজাতির এই ডলফিন। শিল্পায়ন ও ইয়াংসি নদীতে মাত্রাতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে প্রভাব পড়ে এটির জীব চক্রে। ২০০৬ সালে এই ডলফিনকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে চীন।
তাসতাসমানিয়ান টাইগার, প্যাসেঞ্জার পায়রা ও ইন্দোনেশিয়ান জাভা টাইগার
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীতে টিকতে পারেনি ভিন্ন প্রজাতির এই বাঘ। বনাঞ্চল কমে যাওয়া ও খাবার সংকটে এক পর্যায়ে পোষা প্রাণী শিকার করতো তাসমানিয়ান টাইগার। তাই মানুষ নিজ পোষা প্রাণী রক্ষায় হত্যা করতে শুরু করে বাঘটিকে। এতে ধীরে ধীরে বিশ্ব থেকে হারিয়ে যায় এই বাঘ। অস্ট্রেলিয়ার একটি চিড়িয়াখানায় এই বাঘের শেষটিও মারা যায় ১৯৩৬ সালে।

একই পরিণতি হয় ইন্দোনেশিয়ান জাভা বাঘের ক্ষেত্রেও। ৬০-এর দশকে দেখা যেত এই বাঘটিকে। তবে ১৯৮০ সালের পর আর দেখা যায়নি এই বাঘ। পাখি মানুষের খাবার হতে হতে পৃথিবী থেকে আজ বিলুপ্ত। এক সময় উত্তর আমেরিকায় প্রচুর দেখা মিলতো। তবে সুস্বাদু মাংসের জন্য আদিবাসী আমেরিকানদের শিকারে পরিণত হয় এটি। ১৯৭০-৯০ সালের মধ্যে একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যায় প্যাসেঞ্জার পায়রা।
সিরিয়ান বন্য গাধা ও পাইরিয়ান আইবেক্স
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায় পৃথিবী থেকে। ১৫-১৬ শতকে ইরাক, ইসরায়েল সিরিয়া, সৌদি আরব ও তুরস্কে এটি দেখা যেত। মূলত মরুভূমিও রুক্ষ অঞ্চলে এরা টিকে থাকতে পারবো। তবে চোরা শিকারিদের কারণে বন্য গাধাটি শেষ পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে যায়।

বন্য ছাগলটি স্পেন ও ফ্রান্স জুড়ে বিস্তৃত পাইরিনি পর্বতমালাসহ আফ্রিকা ও এশিয়াতে দেখা যেত। তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের শিকারের কারণে ২০০০ সালে চিরতরে বিলুপ্ত হয় প্রাণীটি।
হিথ হেন ও গোল্ডেন টোড
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমেরিকার পূর্ব উপকূলে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে দাবানলের প্রভাবে বুনো মুরগি বিলুপ্ত হয়েছে। ১৯৩২ সালে এই প্রজাতিটি শেষ দেখা গিয়েছিল।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে মেরুদন্ডী উভয়চর এই ব্যাঙ বিলুপ্ত হয় প্রাণীকুল থেকে। সবশেষ কোষ্টারিকার মন্তেভেরদেতে দেখা গিয়েছিল। ১৯৬৪ সালে বিরল প্রজাতির ব্যাঙটি আবিস্কার করেন হার্পেটোলজিস্ট জে স্যাভেজ।