
হাতি যে পথে একবার আসে, সেই পথে ১০০ বছর পর হলেও ফিরে আসে। হাতির স্মৃতিশক্তি এমনই প্রখর বলে জানিয়েছেন প্রাণী গবেষকরা। সম্প্রতি বাংলাদেশে বন কেটে গড়ে উঠছে লোকালয়। এতে নিজের আবাসস্থল খুঁজে না পেয়ে প্রতিশোধ হিসেবে বন্যহাতি প্রায়ই মানুষের ওপর তাণ্ডব চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন হাতি গবেষকরা।
জানা গেছে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল তৈরি করায় কক্সবাজারে হাতির অভয়ারণ্য এলাকার বন-জঙ্গল নিশ্চিহ্ন হওয়াতে হাতি চলাচলের জায়গা সংকুচিত হয়েছে। ফলে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে গত দুই বছর ধরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা-কর্ণফুলী দেয়াঙ পাহাড়ে আসছে হাতি।
সম্প্রতি যে এলাকায় হাতি বেশি আসছে, সেখানে আগে এমন বিচরণ দেখেনি বলে জানান স্থানীয়রা। এতে হঠাৎ হাতির মুখোমুখি হয়ে প্রাণ হারান বেশ কিছু মানুষ। হাতির আক্রমণে এই উপজেলায় ২০১৮ সালে তিনজন, ২০১৯ সালে দু’জন ও সবশেষ এ বছরের জানুয়ারিতে একজনসহ নিহত হন ৬ জন স্থানীয় বাসিন্দা। আহত হন বেশকিছু মানুষ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রতিদিনই পাহাড় থেকে বন্যহাতির দল গ্রামবাসীর জমির ফসল, ঘর-বাড়ি ও গাছপালার ক্ষতি করছে। গত দেড় বছর ধরে তিনটি হাতি আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার দেয়াঙ পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে। তারা কখনো দিনে বা কখনো রাতে লোকালয়ে নেমে আসে।
স্থানীয় বারশত ইউপি চেয়ারম্যান এম.এ কাইয়ূম শাহ ও বৈরাগ ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, হাতির কারণে ক্ষোভে ফুঁসছেন জনগণ। হাতিগুলো খাবারের খোঁজে ছুঁটে আসে দেয়াঙ পাহাড়ে। হাতি থেকে জনগণকে রক্ষায় বনবিভাগকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান তিনি।

এদিকে বন্যহাতি কেইপিজেডের বনায়নকৃত নারকেলসহ নানা ফলজ গাছপালা ও প্রতিষ্ঠানটির স্থাপনার ক্ষতি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন কোরিয়ান কেইপিজেডের কর্মকর্তা মঈনুল আহসান।
পটিয়া বন বিভাগের কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বন্যহাতি জোর করে সরিয়ে নেয়া যায় না। হাতিগুলোকে পাহারায় রাখতে হবে। হাতিরা স্বাভাবিকভাবে ফিরে যাবে। তাই যখন ফিরে যাবে, তখন যাতে আর না আসে সে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে হাতি থেকে নিজেদের রক্ষায় স্থানীয়দের সতর্ক ও সচেতন থাকতে আহ্বান জানান তিনি।
তবে চাইনিজ একাডেমি অব সাইন্সের বন্যপ্রাণী গবেষক নাছির উদ্দিন বলেন, “হাতির আক্রমণে মৃত্যুর জন্য মানুষের অসচেতনতাই প্রধানত দায়ী। হাতি দেখলেই হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে যায়। হাতির বিচরণ যে স্বাভাবিক বিষয়, এটা মানুষ বুঝতে চায় না। হাতিকে বিভিন্নভাবে বিরক্ত করে।”
তিনি বলেন, “একটি হাতি একবার হাঁটা শুরু করলে সে পথ দিয়ে বহুবার আসবে এটা তাদের অভ্যাস। বর্তমানে পথগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। তারা যাবে কোথায়? পাহাড় ছেড়ে হাঁটতে হাঁটতে লোকালয়ে চলে আসে। হাতি পাহাড়ে খাবার পাচ্ছে না। এ সময়ে লোকালয়ে খাবার বেশি থাকে বলে ছুটে আসে তারা।”
নাছির উদ্দিন জানান, পূর্ণবয়স্ক একটি হাতি দিনে ১১০ থেকে ১৩০ কেজি খাবার গ্রহণ করে। বাংলাদেশের পাহাড়গুলোতে এত খাবারের যোগান দেয়ার সক্ষমতা আছে কি না সেটাও দেখতে হবে বলে মন্তব্য করেন এই গবেষক।