সুন্দরবনের বাঘের ‘সহ্য ক্ষমতা বেশি’

সুন্দরবনের বাঘ। ছবি: সংগৃহীত

অন্যান্য অঞ্চলে বাঘ পরিবেশ-প্রতিবেশের বিরুপ প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারে না সহজে। তবে সুন্দরবনের বেঙ্গল টাইগারের সেই সহ্যসীমা বেশি। তাই তো যেকোন প্রতিকূলতায় নিজেকে দ্রুত খাপ খাওয়াতে পারে বলে উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়।

যুক্তরাজ্যের কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে তিনটি ধরন (হেপলোটাইপ) আছে সুন্দরবনের বাঘের। ভারতে দুই, নেপাল ও ভুটানে এক ধরনের বেঙ্গল টাইগার আছে। আর এই জিনগত বৈচিত্র্যের কারণেই প্রতিকূল পরিবেশেও এখনো টিকে আছে সুন্দরবনের বাঘ।

বাঘ গবেষকরা বলছেন, জলাভূমি ও কাদামাটির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবন বেঙ্গল টাইগারের বসবাসের জন্য উপযুক্ত স্থান নয়। কারণ ২৫০ থেকে ৩০০ বছর আগে বাংলাদেশের শুষ্ক ভূভাগ থেকে সুন্দরবনে গিয়ে বসবাস শুরু করে বাঘ। বিশ্বে যে ছয় প্রজাতির বাঘের উপ-প্রজাতি টিকে আছে এখনো, এর সবই মূলত শুষ্ক এলাকায় থাকে। আর তাদের খাবার বা শিকারের আকাঙ্খাও অনেক বেশি।

ভারতের আসামে কাজীডাঙা বনভূমি ও উত্তরাখন্ডের করবেট সংরক্ষিত বনে বড় আকৃতির প্রাণী খেয়ে বড় হয়। যেমন মহিষ, শম্বর, হরিণ, শূকর, বানর, গরু ও ছাগল রয়েছে। ফলে ওই অঞ্চলের বাঘের আকৃতিও বেশ বড়সড়। কিন্তু বাংলাদেশ অঞ্চলের সুন্দরবনে হরিণ ও বুনো শূকর ছাড়া বাঘের খাবার হিসেবে নেই জন্য অন্য কোনো প্রাণী।

কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল আজিজ গবেষণাটির নেতৃত্ব দেন।

এতে আরো যুক্ত ছিলেন বন্য প্রাণিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা প্যানথেরার গবেষক টোলা স্মিথ ও জন হুডরিচ, কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেইডেন জ্যাকসন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম।

গবেষণার ফলাফলটি একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

“সুন্দরবনকে মূলত পশুর ও শিবসা নামের দুটি নদ-নদী ভাগ করেছে। মূলত ওই নদীর কারণেই বাঘের তিনটি ধরন তৈরি হতে পারে,” বলেন বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী।

ভারতের বাঘ বিশেষজ্ঞ ও গবেষণা সংস্থা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অতিথি জ্যেষ্ঠ ফেলো অনুরাগ ডান্ডা বলেন, ভারতের গবেষণাতেও এই বাঘের একই বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে। কিন্তু কয়েক শ বছর ধরে সুন্দরবনের ভেতরেই আটকে থাকায় ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে এই বৈশিষ্ট্যে।

কারণ হিসেবে, সুন্দরবনের লাগোয়া বঙ্গোপসাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধিতে আগের চেয়ে বেশি এলাকা জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি।

“বাঘের অস্তিত্ব রক্ষায় ভারত-বাংলাদেশকে যৌথভাবে সুন্দরবন রক্ষায় কাজ করতে হবে,” বলেন অনুরাগ ডান্ডা।

অধ্যাপক আজিজের গবেষণায়- বাঘের বাঘের মল, লোম, মৃত বাঘের কোষ সংগ্রহ করে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছে। তিনি জানান, অন্যান্য বনের সঙ্গে সুন্দরবনের বাঘের প্রজনন সম্পর্ক না হওয়ায় এর স্বাতন্ত্র্য টিকে থাকবে। এর কিছু ঝুঁকিও রয়েছে, জিনগতভাবে এটি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।”

“মানুষের উৎপাত না হলে তারা এখানে আরো হাজার বছর টিকে থাকবে,” মন্তব্য করেন অধ্যাপক আবদুল আজিজ।

বিশ্ব বন্যপ্রাণী সংস্থা- ডব্লিউডব্লিউএফ এর তথ্যমতে, বিশ্বে এখন টিকে আছে প্রায় তিন হাজার ৯০০টির মতো রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এরমধ্যে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে রয়েছে আড়াই হাজার।বাঘের মূল বিচরণ ক্ষেত্র সুন্দরবনে রয়েছে মোট ১৯৮টি বাঘ; বাংলাদেশ অংশে ১১৪টি, ভারতে ৮৪টি। অবশিষ্ট্য বাঘ বিচরণ করে ভারতের অন্যান্য বনাঞ্চল, নেপাল ও ভূটানে।

আজ বিশ্ব বাঘ দিবস। এবারের মূল প্রতিপাদ্য ‘বাঘ বাঁচাতে শপথ করি, সুন্দরবন রক্ষা করি’।