কয়েকদিন আগেই ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে সুন্দরবনকে বাদ দেয়া হবে এমন গুঞ্জন চলছিল দেশব্যাপী। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের গৌরব যে স্থান সেটি সুন্দরবন; বাংলার বাঘের আবস্থল। তবে ঐতিহ্যের এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগে বিপদের মুখে যখন বনটি; ঠিক তখনই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল ইউনেস্কোও। বিপন্ন উল্লেখ করে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হচ্ছিল সুন্দরবনকে।
কিন্তু নানান দেনদরবারের পর সুন্দরবন সংরক্ষণে সরকার পদক্ষেপ নেবে; এমন আশ্বাসে বাংলাদেশকে সময় দিয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি। এতে ২০২০ সালের কমিটির ৪৪তম অধিবেশনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সংস্থাটি বলে গেলো বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি।
বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র ও আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা-আইইউসিএন’র একটি সুন্দরবন পরিদর্শনে যাবে। এ সময় প্রতিবেশ ব্যবস্থা ও পানিপ্রবাহের ওপর একটি সমীক্ষা করবে। বনের আশপাশের শিলাঞ্চল ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বনের ক্ষতি হচ্ছে কিনা তাও মূল্যায়ন করবে কমিটি।
অবশ্য সভাটি সরাসরি প্রচার করেছে ইউনেস্কো। এতে সুন্দরবন নিয়ে প্রায় ১২ মিনিট আলোচনা হয়। এতে মোট ১১টি সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীসহ মোট ১০ জন।
বিস্তারিতভাবে আলোচনার পর সুন্দরবনকে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাংলাদেশের পক্ষে কিউবা, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং চীন সুন্দরবনকে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করার নতুন সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করে। কিন্তু আলোচনার সময় পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত প্রস্তাবকারী কিউবা, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং চীন ছাড়াও আজারবাইজান, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, তিউনিসিয়া, তানজানিয়া, বুরকিনাফাসো, উগান্ডা, জিম্বাবুয়ে ও পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতসহ ১৫টি সদস্য রাষ্ট্র সরাসরি এ সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দেয়।
কমিটিতে সুন্দরবন সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রশংসিত হয়। কমিটির সদস্য রাষ্ট্রগুলো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও পরিবেশ রক্ষায় পদক্ষেপের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করে বাংলাদেশের অর্জনকে স্বাগত জানায়।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে হালনাগাদ তথ্যসহ প্রতিবেদন দাখিল করবে বাংলাদেশ সরকার। আর দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জন্য কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা (এসইএ) প্রক্রিয়া শুরুর জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানানো হয়।
সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী কমিটির সদস্যদেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বর্তমান কমিটির উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে উৎসাহিত করবে বলে মন্তব্য করেন।
সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভাপতি আঠুলফাস গারায়াভ সুন্দরবন বিষয়ে ইউনেসকোর অবস্থান তুলে ধরতে আহ্বান জানান। সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্যের ১৬.৩ ধারা অনুযায়ী বিশ্ব ঐতিহ্যের পাশে বড় কোনো শিল্পকারখানা হতে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ তা লঙ্ঘন করেছে।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ দরকার। আর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থান সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা থেকে অনেক দূরে।
সভার শেষ পর্যায়ে বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ওয়াচের এক প্রতিনিধি বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখন বিশ্বের টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আর বাংলাদেশ তো প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ঘোষণা দিয়েছে কার্বন নিঃসরণ কমানোর। আর বিশ্বে সবচে বেশি কার্বন নিঃসরণ করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সে মতে এ প্রকল্প প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।