তহবিলের অভাবে নতুন সংকটে অভুক্ত প্রাণীরা!

অভুক্ত পথের প্রাণীরা। ছবি: সংগৃহীত

করোনা ভাইরাসের লকডাউনে মানুষের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পথ কুকুর, বিড়াল ও বানরসহ বিভিন্ন প্রাণী অভুক্ত। তবে দেশগুলোর প্রাণিপ্রেমীরা ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক উদ্যোগে প্রাণীদের নিয়মিত খাবারের ব্যবস্থা করে আসলেও নতুন সংকটে প্রাণীগুলো। যেসব সেচ্ছাসেবী এতদিন প্রাণীদের খাবারের যোগান দিয়ে আসছে তারা এখন আর্থিক অনটনে।

লকডাউনের শুরু থেকেই ভারত, বাংলাদেশ, ভূটান ও নেপালসহ এশিয়ার অনেকে দেশের শহরেই পথ প্রাণীদের অভুক্ত থাকার তথ্য প্রকাশ হতে থাকে গণমাধ্যমে। জানা যায়, স্বাভাবিক সময়ে খাবার দিলেও কোন কোন দেশে হোটেল, রেস্তোরাঁয় থাকা প্রাণীগুলোকে রাস্তায় ছেড়ে দেয় মালিকরা। পাশাপাশি পথ কুকুর, বিড়ালরাও পড়ে তীব্র খাবার সংকটে। এতে প্রাণীগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে।

এমন মহামারী পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক উদ্যোগে চাঁদা তুলে গত দুইমাস অভুক্ত প্রাণীদের খাবার দিয়ে আসছেন প্রাণিপ্রেমীরা। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে এখন তাদের আর্থিক ফান্ড কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রাণী সংরক্ষণ কর্মীরা।

ভারতের দিল্লী শহরে অভুক্ত প্রাণীদের খাবার দিচ্ছেন প্রিয়াংঙ্কা গুসাইন এবং তার মা ভিলচনা। গুসাইন জানান, “এই প্রাণীগুলো খুব অসহায় হয়ে পড়েছে, কেউ তাদের দেখাশোনা করছে না। যার কারণে আমি প্রাণীদের খাবার দেয়ার পদক্ষেপ নিই।” নিজের ডিজাইন করা জুতা বিক্রি করে প্রাণীদের জন্য খাবার ব্যবস্থা করছেন তিনি।

ভারতীয় প্রাণী কল্যাণ সংস্থা ব্লু ক্রসের ভিনোদ কুমার বলেন, ”পরিস্থিতি খুব বেশি সংকটময়। এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে মানুষের বেশি বসবাস নেই, সেই সমস্ত জায়গার কুকুরগুলো অনাহারে রয়েছে।”

ভারতে প্রাণী কল্যাণ কর্মীরা লকডাউনের এ সময়ে ফিডিং পাস বা অনুমতিপত্র পেতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। খাবার দিতে অনেক প্রাণিপ্রেমী নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক গ্রুপ। এ থেকে পাওয়া অনুদানে চলছে প্রাণীদের আহারের কার্যক্রম।

অন্যদিকে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ, নেপাল ও ভূটানের প্রাণিপ্রেমীরাও। বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংস্থা ও সংগঠনসহ ব্যক্তিগত উদ্যোগে অভুক্ত প্রাণীদের আহারের দায়িত্ব নিয়েছেন অনেকেই। ’এক বেলার খাবার বোবা প্রাণীদের জন্য’ নামের একটি গ্রুপের মাধ্যমে গত দেড় মাস ধরে খাবারের ব্যবস্থা করছেন বাংলাদেশের প্রাণিপ্রেমী অর্পিতা খান মহুয়া।

তিনি বলেন, ”লকডাউনের পর থেকে আমাদের গ্রুপের মাধ্যমে ফান্ড তুলে প্রতিদিন একশো কেজি খাবার রান্না করে পথ কুকুরদের খাওয়াচ্ছি। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে আমাদের ফান্ড কমে আসছে। কখনো খাবার দেয়াও আমাদের জন্য মুশকিল হয়ে পড়েছে।” এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ধনী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকারকেও সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।

সারাহ নামের একজন প্রাণিপ্রেমী বলেন, স্বাভাবিক সময়ে টং দোকান ও বিভিন্ন মানুষের দেয়া খাবারসহ ময়লার ভাগাড় থেকে পথ প্রাণীরা খাবার পেত। কিন্তু এখন খাবার হোটেলসহ সবই বন্ধ। এ অবস্থায় নির্ভরশীল প্রাণীগুলো অভুক্ত থাকছে। তাই আমরা খাবার দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। তবে এই কাজটি কতদিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব তা জানি না। কারণ আমাদের ফান্ডও এখন শেষের পথে।

বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়টির ভেতরে আটকে পড়া কুকুর-বিড়ালদের খাবার দিয়ে আসছেন। তবে তারাও ফান্ডের অভাবে হিমশিম অবস্থায় বলে জানান তারা। ঢাকার প্রাণী কল্যাণ সংগঠন ’প’ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল জানান, “ভাত ও মাংস রান্না করে কুকুর বিড়ালগুলোকে খাবার দিয়ে আসছি। রাজধানীর উত্তরায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে আমাদের সংগঠন এ উদ্যোগ নিয়েছে। এতে প্রাণিপ্রেমীরা অংশ নিয়েছে খাবার সরবরাহ করার কাজটি সহজ করে দিয়েছেন।”

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী বিষয়ক সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম মিঠু জানান, লকডাউনের পর থেকেই খাওয়ানোর কাজ শুরু করেছে প্রাণী কল্যাণ সংস্থাগুলো। ঢাকা শহরে কুকুর বিড়ালের পাশাপাশি বানরগুলোও খাবার সংকটে। এ পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরাও উদ্যোগ নিয়ে শহুরে বন্যপ্রাণীদের খাবার দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ”এই মুহুর্তে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে প্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখাটাই মূল চ্যালেঞ্জ।” বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে তাঁর সংস্থা ইকো সেভার্স ফাউন্ডেশনও নিয়মিত খাবার সরবারাহ ও প্রাণিপ্রেমীদের সহযোগিতা করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাওয়ায় বাড়ছে ঘরবন্দী থাকার মেয়াদ। তাই পশুপাখিদের খাবার দিতে আরো তহবিল দরকার। তাই প্রাণীদের খাবার দেয়ার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সকলকে নিজ অবস্থান থেকে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন প্রাণী সংরক্ষণ কর্মীরা।