সময় গড়ালেও তার নাম বৃষ্টিই আছে…

আমাদের সেই সময় বৃষ্টি হলেই কাঁথা গায়ে দিয়ে গড়াগড়ি করতে ইচ্ছে হত। যখন অনেক জোরে শব্দ করে বিদ্যুৎ চমকাত তখন ভাইবোনেরা খাটের নিচে ঢুকে দুই কানে আংগুল গুজে দাদির শিখিয়ে দেয়া সুরা পড়তাম শব্দ করে।

এরপর শুরু হতো ঝুম বৃষ্টি, ওই সময় আমাদের মাগুরার বাড়ির উঠোনে পানি জমে যেত। কারণ বাড়ির দু্ই পাশে দু’টি পুকুর। সেই টলটলে পানিতে ছুটোছুটি করতো হরেক রকমের মাছ। বারান্দায় বসে পা দিয়ে পানি ছুঁয়ে কতো খেলা করেছি।

কখনো আবার ঝুপ করে পানিতে নেমে গামছা দিয়ে ভাইবোনেরা মাছও ধরেছি। এরমধ্যে থাকতো চকচকে পুঁটি মাছ, চিংড়ি, ট্যাংরা, টাকি, বেলে, আরো কতরকম মাছ। চারদিকে থৈ থৈ পানি, সন্ধ্যার দিকে ভাইয়েরা বাড়ির চারপাশে ফাঁদ- “ঘুনী” পেতে রাখতো। সকালে দেখা যেত ঘুনী ভরে গেছে তাজা মাছে।

“ঘুনী হলো বাঁশ দিয়ে বানানো মাছ ধরার ফাঁদ, এতে মাছ একবার ঢুকলে আর বেরিয়ে আসতে পারে না”

এছাড়া বাড়ির চারপাশে ছিল আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম,জামরুল, গোলবরই, কুলবরই,  সুপারি, খেঁজুর আর তাল গাছের ছড়াছড়ি। এদিক-ওদিক যেদিকে চোখ ফেরাতাম সবুজের আহামরি রূপ। বিশেষ করে শীতের সময় বাড়ির সামনে একচিলতে খলাটে বেগুন, লালশাক, মুলা টমেটো, ঢেঁড়শ, ধনেপাতা, কাঁচামরিচের চাষও হতো।

তবে সময় বদলেছে… এখন আমি যেখানে বসবাস করি এর চারদিকে উঁচু ইট-পাথরের দালান। নেই সেই সবুজ গাছগাছালি, ভেসে আসে না ঝুটকুলি, দোয়েল, কোকিল আর টুনটুনির সুমধুর ডাক। আছে শুধু আলিশান বাড়ি-গাড়ি আর আছে মানুষের তৈরি শীতল হাওয়ার এসি!

মাঝে মাঝে মনে মনে ভাবি আর হয়তো ফেরার পথ নেই সেসব প্রাকৃতিক সুখের দিনে। আহা-কই সেই সোনালি দিন? যেসব দিন স্মৃতির চোখে ভেসে ওঠে কিন্তু বাস্তবতায় দেখি না, কারণ এখন না আছে পুকুর, না আগের মত ঝুম বৃষ্টি! পুকুর ভরে পানি আসে না বাড়ির উঠোনে, তাই মাছও দেখিনা। আর আমিও নেই সেই আমি! তবুও স্মৃতির ঝুলিতে মনে করার মত আছে কিছু রঙ্গিন স্মৃতি।

সময় গড়ালেও নাম তার বৃষ্টিই আছে… চেহারাও একই, ঝরার ধরনও একই আছে। কিন্তু এখন সারাদিন বৃষ্টি হলেও সেই আমেজ আর পাই না। কারণ আমরাই বৃষ্টির মান নষ্ট করে দিয়েছি। তাই প্রকৃতিতে হারিয়েছে বৃষ্টির নিজস্বতা। আসলেই আমরা সৃষ্টির সেরা জীব, তাইতো যখন-তখন, যাকে-তাকে শুধুই টেনে ধরি, আছড়ে ফেলি, পিছনে ফেলি আর সেরার চেয়ে সেরা হওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠি।

লেখক: রন্ধন শিল্পী, বাংলাদেশ

***প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বেঙ্গল ডিসকাভার কর্তৃপক্ষ লেখকের মতামতের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।