বন্যপ্রাণী বাঁচানো সেই বীরপুরুষের গল্প

নিজের হাতে গড়া বনাঞ্চলে জাদব পায়েং। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের আসামের নাগরিক জাদব পায়েং। গত ৩০ বছর ধরে নীরবে নির্ভতে রোপণ করে গেছেন শত শত গাছ। যা এখন এক হাজার ৩৬০ একরের বনাঞ্চল। এতে ঠাঁই হয়েছে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর। সম্প্রতি গণমাধ্যমে জাদব পায়েংয়ের এই র্কীতি উঠে এসেছে।

জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে জাদব পায়েংয়ের বয়স তখন ১৬ বছর। সে সময় বন্যায় আসামের গুয়াহাটির ৩৫০ কিলোমিটার দূরের জোরহাটের একটি বালুচরে এসে জমা হয়েছিল বহু সাপ। কিন্তু বন্যার পানি অনেকটা নেমে যাবার পর কিশোর জাদব খেয়াল করে নিথর পড়ে আছে অনেক মৃত সরীসৃপ। মূলত বালুচরে কোনো গাছ না থাকায় রৌদ্রতাপে মারা যায় সাপগুলো।

ছোট্ট সাপগুলোর প্রাণহীন দেহ দেখে কষ্টে কেঁদে ফেলেন ছোট্ট জাদব পায়েং। ভাবতে লাগলেন, ছায়ার অভাবে এতো সাপ মারা গেল। যদি বালুচরে গাছপালা থাকতো হয়ত মারা যেত না সাপগুলো। জাদব স্থানীয় বনবিভাগকে সতর্ক করে এবং জানতে চায়, বালুচরটিতে গাছ লাগানোর পদক্ষেপ নেবে কিনা। কিন্তু বনবিভাগ জানায়, অনুর্বর ওই মাটিতে কিছুই জন্মাবে না। তবে পায়েংকে বাঁশ গাছ রোপণ করে দেখতে বলে। এতে কষ্ট পেলেও জাদব পায়েং নিজ উদ্যোগেই বালুচরের মাটিতে গাছ লাগায়।

জাদব পায়েং জানান, এ কাজে কেউই সাহায্য করেনি, এমনকি আগ্রহও দেখায়নি। তবে সে সিদ্ধান্ত নেয় সেখানেই গড়ে তুলবে বন্যপ্রাণীর আশ্রয়স্থল। যাতে প্রাণীরা সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারে। এজন্য সে বালুচরে এসে থাকতে শুরু করে, যাতে নতুন বনভূমির বাস্তুতন্ত্র তৈরিতে পূর্ণাঙ্গ সময় কাজ করতে পারে।

জাদব পায়েং নিজ হাতেই বীজ বপন করতো ও গাছে পানি দিত। অল্পদিনেই জায়গাটি বাঁশঝাড়ে রূপান্তরিত হয়। এরপর সেখানে ভিন্ন গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয় জাদব। এজন্য সংগ্রহ করতে রোপণ করতে থাকে নানা প্রজাতির গাছ। শুধু গাছই নয়, প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে ও বাস্তুতন্ত্রের প্রাকৃতিক সম্প্রীতি বাড়াতে সেখানে পিঁপড়ার জন্ম, বাসস্থান ও বেড়ে ওঠার ব্যবস্থা করে। এতে দ্রুত ছায়াহীন বালুচরটি প্রাণীদের জীবনধারণের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশে পরিণত হয়। আর এভাবেই দীর্ঘ ৩০ বছরে একা হাতে লাগানো গাছ রূপান্তরিত হয় ১ হাজার ৩৬০ একরের জঙ্গলে।

জাদব পায়েং এর এই পদক্ষেপে ওই অঞ্চলে খুব অল্প সময়ে বন্যপ্রাণীরা উপকৃত হয়েছে। ‘মোলাই অরণ্য’ নামে পরিচিত এই বন এখন শকুন, হরিণ, গণ্ডার, বাঘ ও হাতিসহ বিপন্ন অনেক প্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এছাড়াও আসে বহু পরিযায়ী পাখি।

২০০৮ সালে ওই অঞ্চলের আশপাশের গ্রামগুলোতে তাণ্ডব চালিয়ে প্রায় ১০০ বন্য হাতি মোলাই বনে প্রবেশ করলে পায়েংয়ের বনটি সম্পর্কে প্রথম জানতে পারে আসাম বন বিভাগ। তখন সহকারি বন সংরক্ষক গুনিন সাইকিয়া প্রথমবারের মতো পায়েংয়ের সাথে দেখা করেন।

সাইকিয়া বলেন, বন্য হাতি স্থানীয় যাদের বাড়িঘরের ক্ষতি করেছিল, তারা বনটি কেটে ফেলার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু পায়েং বলেছেন, বন কেটে ফেলার পরিবর্তে যেন তাকেই হত্যা করা হয়। তিনি গাছ ও বনের জীবজন্তুকে নিজের সন্তানের মতোই পালন করেন। আর আমরাও বনের ভেতর প্রবেশ করে অবাক হই। প্রায় ৩০ বছর ধরে পায়েং যে বন তৈরি করেছেন তা অন্য কোনো দেশে করলে হয়ত তাকে বীরপুরুষ খেতাব দেয়া হতো।