‘দুধ কলা দিয়ে সাপ পোষা’ একটি নিতান্তই বাগধারা যা নাটক, সিনেমা বা গল্প উপন্যাসে প্রতিনিয়ত ফুটে উঠে। এখন প্রশ্ন হলো- সাপ পোষাটা কী আসলেই দুধ-কলা দ্বারা হয়? কিংবা সাপ কি দুধ পান করতে পারে? উত্তর আসবে, ‘না’।
সাপের খাদ্য তালিকায় দুধ-কলা কোনটার অস্থিত্ব নেই বলেই হয়তো ভাষাবিদগণ এমন অসম্ভব আবির্ভাবটি ঘটিয়েছেন। গো-পালনকারীদের অনেকে আবার তাদের গোয়ালের আনাচ-কানাচে সাপের আনাগোনা ও প্রিয় গাভীটির স্তনে ফাটল- এই দুইয়ের মাঝে একটি কাল্পনিক সম্পর্ক প্রকল্পন করার ব্যর্থ প্রয়াস পান অর্থাৎ তারা স্তন ফাটলের কারণ হিসেবে ওই বেচারা সাপকেই দায়ী করেন।
কিন্তু বাস্তবে গো-স্তন থেকে সাপ দুগ্ধ পিয়াচ্ছে- এমন দৃশ্যের কোন চাক্ষুষ দর্শক কী পাওয়া যায়? পাওয়া যায় না। এমন দর্শকের খোঁজ কেবল কল্পনাতেই মেলে! তদুপরি টিভি সিনেমার প্রচারেই হোক বা সর্প পূজারীর দাপটেই হোক সাপ যে আসলে দুগ্ধ পান করে না বা করতে পারেনা, এই চরম সত্যটি আমরা বেমালুম ভুলে যাই। তর্ক বিতর্কে প্রতিনিয়ত অতর্কিত বাড়াবাড়ি করি। বাক বিতণ্ডা করি। হরহামেশা চলে, চালাই সাপ-দুধ নিয়ে এই কল্পিত কল্পনার আল্পনা। আরও কত কী।
কারণগুলো জানা যাক:
সাপ একটি সরীসৃপ, বিশুদ্ধ মাংসাশী প্রাণী। তাই দুধ তার খাদ্য নয় অর্থাৎ সাপ দুধ পান বা তৈরি করতে পারে না। অধিকন্তু এদের কোন দুগ্ধক্ষরা গ্রন্থি নেই।
সাপের জিভ দ্বি-বিভাজিত। এহেন গঠন হেতু দুধ পান সম্ভবই নয়। দুধ হজমকারী কোন কার্যকর এনজাইমই এদের থাকে না। তাই সাপের দুধ পান প্রশ্নযুক্ত থেকে যায়।
সাপের দন্তগুলো ভেতরের দিকে চাপানো থাকে, যা ওই দ্বি-বিভাজিত জিভ নিয়ে দুধ পানকে সমর্থন করে না।
গোয়াল বিচরণের হেতু তার শিকার ও প্রজনন উদ্দেশ্যের মধ্যে নিহিত আর গো-স্তনে ফাটল মানুষের ত্বক ফাটলের মতই। তবে স্তন ফাটলের অন্যতম প্রধান কারণ স্তন প্রদাহ।
কিছু সাপান্ত নিয়ে জানা যাক:
পৃথিবীতে দু’ধরণের সাপ বর্তমান- বিষাক্ত ও নির্বিষ। সাধারণত বিষাক্ত সাপগুলোর মাথা ত্রিকোণাকার ও নির্বিষ সাপগুলোর মাথা গোলাকার হয়ে থাকে।
সাপ মেরুদণ্ডী, সম্পূর্ণ পা-হীন সরীসৃপ। সুতরাং সাপের পা দেখার সাধ্যি কারো সাধ্যের মধ্যে পড়ে না। শরীরের বিভিন্ন মাংসপেশীর সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে এরা চলাচল করে। এদের কোন নেত্র পল্লব নেই। তাই এরা কুন্ডলী পাকিয়ে চোখ খোলা রেখেই ঘুমায়।
সাপের স্বরতন্ত্র ও বহিঃকর্ণ একেবারেই অনুপস্থিত। আর তাই সাপুড়ের বাঁশির সুরে এরা দোলে না, দোলে সাপুড়ের হাত তথা বাঁশির নাড়নে। কিন্তু কতিপয় সিনেমাতে ফুটিয়ে তোলা বাঁশির সুরের মূর্ছনায় বিশেষ কোন সাপের সাত সমুদ্র তের নদী নির্ভুল পথ পাড়ি দিয়ে প্রধান বা অপ্রধান কোন চরিত্রের আরোগ্যতা লাভ সত্যিই হাস্যকর।
বিস্তৃত ফুসফুসের কারণে এরা অনেকক্ষণ পানির নিচে নিমজ্জিত থাকতে পারে। এরা মোটেও প্রতিহিংসাপরায়ণ নয়। অর্থাৎ সাপকে আঘাতকারীর কখনো ওই সাপ বা তার প্রিয়জন দ্বারা ঝোপ বুঝে কোপ খাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ সাপের ক্ষুদ্র চোখে আহতকারীর অবয়ব বিশালাকার মনে হয়, এতে ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে চেনা খুব কঠিন। আরেকটি কারণ হল সাপের অনুন্নত মস্তিষ্ক। ফলসরূপ, সংগঠিত স্মৃতি তার খুব কম সময় স্মরণ থাকে।
পুনশ্চ, আত্মরক্ষার্থে ব্যবহৃত সাপের লেজ ব্যক্তির শরীর প্যাঁচায় না; নিরীহ লাঠির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় মাত্র। সাপের মাথায় মণির অস্থিত্ব সাপুড়ের কল্পনা প্রসূত আল্পনা বৈ কিছু নয়!
লেখক: এমডিভি এক্সপার্ট, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ।
***প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বেঙ্গল ডিসকাভার কর্তৃপক্ষ লেখকের মতামতের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।