কর্ণফুলীতে এতো বর্জ্য, শক্তিশালী মেশিনও ফেল!

কর্ণফুলী নদীতে ড্রেজিংয়ে সাকশান মেশিনে উঠে আসে বর্জ্য। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশের মাটি খননে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্য। এজন্য গত মার্চে চীন থেকে আনা হয় ৩১ ইঞ্চি ব্যাসের অত্যাধুনিক শক্তিশালী সাকশান ড্রেজার। কিন্তু প্লাস্টিক ও কাপড়ের বর্জ্য এতোই বেশি আধুনিক মেশিনটিও বিফল হচ্ছে তা সরাতে।

“কর্ণফুলীর পানির তলদেশের চার মিটার নিচেও মিলছে কঠিন বর্জ্য। ফলে যেখানে ঘণ্টায় আড়াই হাজার ঘনমিটার মাটি উত্তোলন সম্ভব, তা দিয়ে দিনে ৫ থেকে ৮ হাজার ঘনমিটার মাটি উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে,” জানান চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ হাইড্রোগ্রাফার ও প্রকল্প পরিচালক কমান্ডার এম আরিফুর রহমান।

তিনি জানান, ৩০ জুনের মধ্যে ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য থাকলেও হয়েছে ৩০ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ড্রেজিংয়ের আগে বর্জ্য অপসারণ করতে হবে। কঠিন বর্জ্যের কারণে কাজ করছে না চীনের শক্তিশালী ড্রেজার মেশিনও। তাই এখন গ্রেভ শিপের প্রয়োজনীয়তাও দেখা দিয়েছে। এজন্য চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে একটি প্রস্তাবনাও দেয়া হয়েছে।

এরই প্রেক্ষিতে কর্ণফুলীর তলদেশে কী পরিমান বর্জ্য রয়েছে তা নির্ধারণেও যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে বুয়েট, নৌবাহিনী ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

নদীর তলদেশ থেকে উঠে আসা প্লাস্টিক ও কাপড়ের বর্জ্যের স্তুপ। ছবি: সংগৃহীত

বর্জ্যগুলো সংগ্রহের পর নির্দিষ্ট স্থানে রেখে রোদে শুকানোর পর পুড়িয়ে ধ্বংস করা হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক কমান্ডার এম আরিফুর রহমান। 

তিনি জানান, চট্টগ্রাম নগরীর সবধরনের ময়লা সরাসরি নদীতে পড়ছে। কর্ণফুলীতে সংযুক্ত খালগুলোর মুখে নেই কোনো ধরনের প্রতিবন্ধক। তাই আবর্জনা সরাসরি নদীতে এসে পড়ছে।

শহরের ময়লা যাতে নদীতে না পড়ে এজন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- সিডিএকে ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব পাঠিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ক্যাপিটাল ড্রেজিং শেষ হলে বেশি সংখ্যক ছোট জাহাজ নদীতে নোঙর করতে পারবে। সেইসঙ্গে সদরঘাট এলাকায় চারটি লাইটার জেটি চালু হবে। এতে বহির্নোঙর থেকে আনা আমদানিকৃত পণ্য জেটিতে নামানো সহজ হবে, কমবে পরিবহন খরচও। নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে বর্ষাকালে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা কমবে।

প্রসঙ্গত, কর্ণফুলী ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প নিয়ে আদালতে মামলার কারণে ‘সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’ প্রকল্প হাতে নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও চায়না হারবার। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪২ কোটি টাকা।

এর আগে ২০১৭ সালে ২৭ ডিসেম্বর প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি। ২০১৮ সালের ৫ মে চুক্তি সম্পাদনের পর ড্রেজিং শুরু হয় ২৬ সেপ্টেম্বর।