
বাংলাদেশের চট্টগ্রামের একটি মসজিদে দেখা মিলল বিপন্ন প্রজাতির ছোট খাটাশ। যদিও প্রাণীটি চট্টগ্রামের মানুষের কাছে বাঘডাশ নামে বেশ পরিচিত। তবে এ দেশে ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের রক্ষিত বন্যপ্রাণীর তালিকার তফসিল-১ অনুযায়ী প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
মঙ্গলবার বিপন্ন প্রজাতির ওই খাটাশটির দেখা মিলল রাউজান উপজেলার ৪ নম্বর গহিরা ইউনিয়নের কোতোয়ালি ঘোণা গ্রামের কাজী পাড়া এলাকার রাইতুল ইজ্জাত জামে মসজিদে। রাত ৮টার দিকে এশার নামাজ পড়তে মসজিদে গেলে হাজী মো. রফিক নামে এক মুসল্লি এ বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীটিকে প্রথমে দেখতে পান।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সাইফুল হক জানান, এ প্রাণীটি দেখতে অনেকটা হিংস্র ধরনের। তবে এটিকে দেখে ক্ষুধার্ত মনে হয়েছিল। কিছু শিশু-কিশোররা জাল দিয়ে আটক করে প্রাণীটিকে হত্যার করতে উদ্যত হয়। তবে কিছু মুসল্লি প্রাণীটিকে রক্ষা করেন। বাঘডাশটি দৈর্ঘ্য আড়াই ফুট ও সাড়ে তিন কেজি ওজনের বলে উল্লেখ করেন এই তিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, ছোট খাটাশ একটি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী। এ ধরণের খাটাশ ‘গন্ধগোকুল’ নামেও এলাকাভেদে পরিচিত হলেও চট্টগ্রামের মানুষের কাছে বাঘডাশ নামে বেশ পরিচিত। এরা গাছে চড়তে ওস্তাদ।
প্রাণীবিদরা জানান, বাঘডাশ খুবই সচল এবং ভালো দৌড়াতে পারে। এরা স্বল্প জায়গায় আত্মগোপনে পারদর্শী। ওজন তিন থেকে পাঁচ কেজি হয়। শরীরের মাপ লেজ বাদে ৯০ থেকে ৯৩ সেন্টিমিটার, লেজ ৩০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। বাঁশবন-ঘাসবন, শুকনো কাশবন, খড়বন, জালিবেতঝাড়, ইটের পাঁজা ও ঝোপঝাড়ই নিরীহ স্বভাবের প্রাণীটির আবাসস্থল।
মনঞ্জুরুল কিবরিয়া জানান, প্রায় সব ধরনের ফল, ছোট প্রাণী ও পতঙ্গ, তাল-খেজুরের রস ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে প্রাণীটি। গাছে উঠতে পারলেও মাটিতেই শিকার ধরে এরা। ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, ছোট পাখি, টিকটিকি, কীটপতঙ্গ ও সেগুলির লার্ভা খেয়ে থাকে। কখনো গৃহস্থের হাঁস-মুরগিও চুরি করে। দেশভেদে এদের খাবারের তারতম্য দেখা যায়। কফি এদের অন্যতম প্রিয় একটি খাদ্য।
প্রসঙ্গত, আবাসভূমি ধ্বংস ও হাঁস-মুরগি রক্ষায় মানুষ এদের ব্যাপক নিধন করায় প্রাণীটি এখন বিপন্ন। ছোট খাটাশ বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মায়ানমার, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চীন, হংকং, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে দেখা যায়।