
মানুষের রসনার স্বাদ মেটাতে বিশ্বে বিলুপ্তির পথে নানান প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণী। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হচ্ছে সাগরের জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষক খ্যাত হাঙরও। এর কারণ হাঙরের পাখনার স্যুপের জনপ্রিয়তা।
চীন ও ভিয়েতনামসহ অনেক দেশেই অভিজাত সমাজের অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যগতভাবে পরিবেশিত হয় হাঙরের পাখনার স্যুপ। এই চাহিদা ২০০১ সালের তুলনায় এখন দ্বিগুণ।
প্রাণী সংরক্ষণবাদীরা বলছেন, বর্ধিত চাহিদা মেটাতে বাড়ছে হাঙর শিকারও। যার নেপথ্যে রয়েছে মানুষের রসনার স্বাদ মেটানো।
সোয়ারি ইন্সটিটিউট অব মেরিন সায়েন্স জানায়, হাঙরের পাখনার অর্ধেকের বেশী বিক্রি হয় হংকং-এ। আর দেশটিতে বিক্রি হওয়া ৩৩ শতাংশ হাঙরের পাখনাই আইইউসিএন-এর বিপন্ন তালিকাভুক্ত।
এক সময় বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে ছিল প্রচুর হাঙর। দিন বদলে সঙ্গে দখল, দূষণ আর পলি জমে নাব্যতা হারাচ্ছে নদী। এতে নদ-নদীর হাঙর বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, নদীতেও ব্যাপকভাবে হাঙর ধরাও হতো। আর পাচারকারীরা শিকার করে অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে প্রাণীটির।
বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলে বিভিন্ন গবেষণায় কাজ করছেন আন্ডারওয়াটার এক্সপ্লোরার এস এম আতিক রহমান।

তিনি বেঙ্গল ডিসকাভার-কে জানান, বঙ্গোপসাগরের কয়েকটি পয়েন্টে হাঙর ধরা পড়ে বা সংগ্রহ করা হয়। এরমধ্যে সবচে বেশি কক্সবাজার ও কুয়াকাটা, তবে সেন্টমার্টিন্স ও কুয়াকাটায় খুব বেশি না। বাংলাদেশে রিফ ও হেমারহেডেড সার্ক বেশি। তবে হোয়েল শার্কও ধরা পড়ে কমবেশি।
“সার্ক শিকারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে ফিশিং করা হয় না, তবে জালের কারণেই ধরা পড়ে,” যোগ করেন আতিক রহমান।
তবে বিভিন্ন দেশে সাগরে মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে জালের দৈর্ঘ্য কমাতে চেষ্টা করছে এখন, কিন্তু বাংলাদেশে এখনো এমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি, উল্লেখ করেন তিনি।
গবেষণা বলছে, খাবারের যোগান দিতে এক হাজারের বেশি হাঙরের প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। এজন্য বছরে হত্যা করা হয় ১০ কোটি হাঙর। এমন চলতে থাকলে কনড্রাইকথিল প্রজাতির যে এক হাজার ৪১টি রয়েছে, এর ৩১৩ প্রজাতি আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না।
তাই হাঙর সংরক্ষণে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেয়ার বিকল্প নেই বলে বলছেন গবেষকরা।
অস্ট্রেলিয়ান ইন্সটিটিউট অব মেরিন সায়েন্স এর মেরিন বায়োলজিস্ট মার্ক মিকান বলেন, “হাঙরের মাংসের চাহিদা বেশ কম। কিন্তু হাঙরের পাখনার বিপুল চাহিদা রয়েছে। শুধু এই একটি কারণেই বিপুল পরিমাণ হাঙর হত্যার শিকার হয়।”
“বড় রকমের মৎস আহরণে হাঙরের টিকে থাকার সক্ষমতা নেই। তারা ধীরে বাড়ে। বড় হতে তাদের প্রচুর সময় লাগে। যদি প্রাণীটি এভাবে শিকার হতে থাকে, তারা একদিন হারিয়ে যাবে,” যোগ করেন এই গবেষক।