শঙ্খিনী সাপের জীবন বাঁচালেন বয়োজ্যেষ্ঠরা

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার নুর হোসেন বাড়িতে দেখা যাওয়া শঙ্খিনী সাপ।

বাংলাদেশের পরিবেশের সঙ্গে উপযোগী অন্যতম একটি সাপ ’শঙ্খিনী’। এ দেশের গ্রাম-গঞ্জে বা এলাকা ভেদে সাপটি শাখামুটি সানি সাপ বা দুই মাথা সাপ নামেও ডাকা হয়। অন্য সাপও এদের ভয়ে পালিয়ে যায়। তবে বাংলাদেশ এটিকে বিপন্নপ্রায় সাপ হিসেবে উল্লেখ করেছে প্রকৃতি সংরক্ষণে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা-আইইউসিএন।

গেল ২৫ জুন, বৃহস্পতিবার এ দেশের চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা দক্ষিণ মার্দাশা ইউনিয়নের বাসিন্দা নুর হোসেনের বাড়িতে দেখা গিয়েছিল বিপন্ন প্রজাতির একটি শঙ্খিনী সাপ। লম্বায় প্রায় ছয় ফুটেরও বেশি বড় ছিল বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা গেছে, বিষধর সাপটি দেখে বাড়ি লোকজন চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় কয়েকজন যুবক সাপটিকে মেরে ফেলতে উদ্যত হয়।কিন্তু উপস্থিত বয়োজ্যেষ্ঠরা বাঁধা দিলে সাপটি মারেনি যুবকরা। পরে সাপটি নিরাপদে ওই বাড়ি ত্যাগ করতে সহায়তা করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

শঙ্খিনী সাপ। ফাইল ছবি, তুলেছেন: আদনান আজাদ আসিফ, বন্যপ্রাণী গবেষক।

শঙ্খিনী সাপের বৈজ্ঞানিক নাম Bungarus Fasciatus, ইংরেজী নাম হলো Banded krait। এই সাপের বিষ নিউরোটক্সিন।সাপ বিশেষজ্ঞরা জানান, এ সাপ যে এলাকায় থাকে অন্য কোন সাপ সাধারণত ওই এলাকায় থাকে না। কারণ অন্য প্রজাতির সাপ যেমন- কেউটে, গোখরা, কালাচসহ অন্যান্য বিষাক্ত সাপ শঙ্খিনীর প্রিয় খাদ্য। তাই এদের ভয়ে অন্য সাপও পালিয়ে যায়।

বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফ জানান, অতি সুন্দর ও চমৎকার রঙে সজ্জিত শঙ্খিনী সাপের মাথা আকারে বেশ বড়, সারা শরীরজুড়ে কালো ও হলুদ ডোরা থাকে। খুব বিষধর হলেও দেশের ইতিহাসে শঙ্খিনী সাপের দংশনে মানুষ মারা যাওয়ার ইতিহাস নেই। এই সাপ ছয় থেকে সাত ফুট লম্বা হতে পারে।

তিনি বলেন, এদের দু’মুখো সাপও মনে করে মানুষ, যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। লেজের অংশটি ভোঁতা থাকে বলে অনেকেই দু’মুখো সাপ ভেবে ভুল করেন। এরা নিশাচর। ইঁদুরের গর্ত, ইটের স্তূপ এবং উইয়ের ঢিবিতে থাকে।

শঙ্খিনীকে বাংলাদেশের আবাসিক সাপও বলা হয়। সারাদেশেই দেখা গেলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় বেশিই দেখা যায়। পাশাপাশি ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কম্বোডিয়া, লাওস, ম্যাকাও, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রুনাইয়েও এদের দেখা যায়।