অপরিকল্পিত মাছ ধরা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্লাস্টিক দূষণের ফলে হুমকির মুখে বিশ্বের সাগর-মহাসাগর। এ কারণে অস্তিত্ব সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের সামুদ্রিক প্রাণীর। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিলুপ্তির মুখে বহু প্রজাতির মাছ ও প্রাণী। এর পাশাপাশি সম্প্রতি আফ্রিকা অঞ্চলের দেশ ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর রডরিগো দ্য ফ্রেইতাস ল্যাগুনে দূষণের কারণে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় মরে ভেসে উঠেছে কয়েক লাখ মাছ।
এমন অবস্থায় সমুদ্র সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনামূলক কার্যক্রম নেয়ার তাগিদ দিচ্ছেন সমুদ্র বিজ্ঞানীরা। মেক্সিকোতে গেলো মার্চে অনুষ্ঠিত বিশ্ব সমুদ্র সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদরাও এমনই মত দিয়েছেন। সাগর কেন্দ্রিক অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে প্রতি বছর এই সম্মেলনের আলোচনা গুরুত্ব দেয়া হলেও এবার সমুদ্র সম্পদ রক্ষার বিষয়টি ছিল আলোচনার কেন্দ্রে।
মূলত আগামী প্রজন্মের জন্য সাগরকে রক্ষা করার নানান পদক্ষেপের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এই পরিকল্পনাকে ‘ব্লু ইকোনমি’ বা ‘নীল অর্থনীতি’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
সমুদ্র বিশেষজ্ঞ আলেকজান্ডার কস্তো জানান, পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে ব্লু ইকোনমি। যাদের জীবিকা সাগর নির্ভর তাদের জন্য এর মাধ্যমে নেয়া হবে পরিকল্পিত পদক্ষেপ।
বিশ্বের আনুমানিক শত কোটি মানুষ সাগর সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর প্রধান খাদ্যের উৎস মাছ। বিশ্বের অন্যান্য জলাশয় থেকে যে মাছ আহরণ হয় এর চারগুণ ধরা হয় সাগর থেকে।
অপরিকল্পিত মাছ আহরণের কারণে সমুদ্রের জীব-বৈচিত্রে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের পরিবেশ বিষয়ক কর্মকর্তা ক্যারিন ক্যাম্পার। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনেরকারণে বেড়ে যাচ্ছে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা। লবণাক্ততা বাড়ছে একইসঙ্গে, যা সামুদ্রিক কোরালের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর কোরালপ্রাচীর মাছের অন্যতম আবাসস্থল ও খাবার জোগায়। মাছ কমে যাওয়ার আরো বড় কারণ প্লাস্টিক দূষণ। সাগরে প্লাস্টিক যে পরিমাণ বেড়েছে তা পরিষ্কার করতেও দরকার বিপুল অর্থ।
এদিকে, সাগর থেকে মাছ আহরণের পরিমাণ কমাতে একুয়াকালচারকে বিকল্প হিসেবে ভাবছে বিভিন্ন দেশ। এরইমধ্যে একুয়াকালচার থেকে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক ‘সি-ফুড’ এর যোগান আসছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে পরিবেশ দূষণ আরো বাড়বে। যা অদূর ভবিষতে জীব-বৈচিত্রের জন্য হুমকি তৈরি করবে। এ কারণে ব্লু-ইকোনমির মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকাগুলোকে রক্ষা এবং সংরক্ষণের জোর দাবি উঠছে বিশ্বব্যাপী।