বিনোদন-শিকার নিষিদ্ধের পক্ষে নন বিজ্ঞানীরা!

ট্রফি হান্টিংয়ের অংশ হিসেবে হত্যা করা হয় হাতিটিকে। ছবি: সংগৃহীত

উন্নত দেশগুলোতে বন্যপ্রাণী শিকার শৌখিন মানুষের বিনোদন হিসেবে জনপ্রিয়। রীতিমতো রাখঢাক করে ‘ট্রফি হান্টিং’ নামে আয়োজন করা হয় প্রতিযোগিতাও। তাই অনেকেই ছুটিতে বন্দুক হাতে প্রাণী শিকারে যান জঙ্গলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেছে নেন দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকান দেশগুলোকে।

অবশ্য এতে ওই দেশগুলোও শিকার প্রতিযোগিতাকে কাজে লাগিয়ে বাড়তি উপার্জনও করে নেয়। কিন্তু বিপরীতি ক্ষতি প্রাণ-প্রকৃতিতে। এতে বিলুপ্তির পথে সিংহ, হাতিসহ বহু প্রাণী।

এ কারণে অনেকদিন ধরেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকর্মীরা এই অমানবিক বিনোদন বন্ধের দাবি আসছে। সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকারও ‘ট্রফি-হান্টিং’ নিয়ে নতুন আইন প্রণয়ন বিষয়ে ভাবছে, আর ঠিক এমনই সময়ে ১৩৩ বিজ্ঞানী শিকার বন্ধের বিপক্ষে মত দিয়েছেন।

সিংহ হত্যার পর উল্লাস। ছবি: সংগৃহীত

তাদের মতে, বিনোদনের জন্য বনে-জঙ্গলে শিকার কিংবা ট্রফি হান্টিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করলেও প্রাণীদের রক্ষা করা যাবে না।

খোলা চিঠিতে বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, তাদের কাছে জোরালো প্রমাণ আছে যে ‘ট্রফি হান্টিং’ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলে প্রাণী সুরক্ষায় তা সহায়ক হবে না। বরং এতে নেতিবাচক প্রভাবও পড়বে।

‘ট্রফি হান্টিং’-এ শিকার করা প্রাণীদের শিং, মাথা, চামড়া সংরক্ষণ করা হয়। আর প্রাণীদের দেহ খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া সফল শিকারিদের স্মারক হিসেবে সুযোগও দেয়া হয় প্রাণীদের অঙ্গ-প্রতঙ্গ প্রদর্শনের।

হত্যা করা জিরাপের মৃতদেহের সঙ্গে ছবি তুললেন শিকারিরা। ছবি: সংগৃহীত

বিনোদনের উদ্দেশ্যে শিকার করা পশুদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রদর্শনের জন্য রেখে দেয়াকে সমর্থন করেন না জানিয়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অভয়ারণ্য বিশেষজ্ঞ ড. অ্যামি ডিকম্যান। তবে তিনি শিকার বন্ধের বিরুদ্ধে।

“যদি হান্টিং ট্রফি বন্ধ হয়ে যায়, তবে বিশাল বনাঞ্চল অন্য কোনো কাজে ব্যবহার এবং প্রাণীদের বাসস্থানও নাই হয়ে যেতে পারে,” উল্লেখ করেন ডিকম্যান।

চিঠিতে ড. ডিকম্যান ও তার সহকর্মী বিজ্ঞানীরা বলেন, “বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আবেগী না হয়ে তথ্য-প্রমাণে ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।”

শিকার করা প্রাণীদের মৃতদেহ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রদর্শণী। ছবি: সংগৃহীত

প্রাণী হত্যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে বলেও মনে করেন বিজ্ঞানীরা। উল্লেখ করেন, “সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলে আরো বেশি প্রাণী নিহত হবে। হয়তো সামাজিক মাধ্যমে তা দেখা যাবে না, তবে ফাঁদে ফেলে, বিষ প্রয়োগ করে ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সংঘাতে হত্যা করা হবে প্রাণীদের।”

অধ্যাপক ডিকম্যান বলেন, “ট্রফিং হান্টিং ও পর্যটনের জন্য ব্যবহার না হলে সরকার বনাঞ্চলে অর্থনৈতিক কোন লাভ খুঁজে পাবে না। ফলে বনাঞ্চলের রক্ষা বা সুরক্ষার দিকে নজর দিবে না। এতে গোপনে প্রাণী হত্যা হতেই থাকবে।”