ভারত থেকে নামছে বালু-পাথর, হুমকিতে বাংলাদেশ!

মেঘালয়ের পাহাড় বেয়ে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নদীতে আসা বালু ও পাথরে ভরাট হচ্ছে নদী ও জমি। ছবি: বেঙ্গল ডিসকাভার

ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে প্রায় ৪০টি ছড়া দিয়ে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে আসছে বালু-পাথর। এতে হাওড় এলাকা সুনামগঞ্জের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। পরিবেশবিদদের মতে, সীমান্তের ভারতীয় অংশে পাহাড়ে পাথর ও বালু উত্তোলনই সুনামগঞ্জের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্টের জন্য দায়ী। এতে নাব্যতা সংকটসহ বিলীন হচ্ছে নদী ও ফসলি জমি। অবিলম্বে তা বন্ধ না হলে সুনামগঞ্জের প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা

সরেজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্ত এলাকা তাহিরপুর, বিশ্বাম্ভরপুর, দোয়ারা বাজার, ছাতক, ধর্মপাশা, জেলা সদরের ডলুরা, নারায়নতলায় ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে ছড়া ও নদী দিয়ে আসছে বালু ও পাথর। এতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের জলাশয়, বিভিন্ন স্থাপনা ও ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মাহারাম নদীসহ ১২টি নদী অস্তিত্ব সংকটে। প্রায় ২৩টি নদী হারিয়েছে নাব্যতা। ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, ভারতীয় মেঘালয় পাহাড় থেকে ছড়ার মাধ্যমে বালু ও পাথর ঢলের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন এলাকাবাসী। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কৃষকরা জানান, ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসের আতঙ্কে দিন পার করেন তারা। ইতিমধ্যেই অনেকেই হারিয়েছেন জমি। এতে ভুক্তভোগী পাহাড়ে বসবাসকারী প্রায় পাঁচ শতাধিক আদিবাসী পরিবার। বর্ষায়ও বেড়েছে নদী ভাঙ্গনের পরিমান, একইসঙ্গে বাড়ছে ঘর হারা মানুষও।

বালু-পাথরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার চিত্র। ছবি: বেঙ্গল ডিসকাভার

তাহিরপুর সীমান্তের চাঁনপুর গ্রামের আজিজুল ইসলাম নুর জানান, ২০০৮ সালের জুলাইয়ের ভারী বৃষ্টিপাতে উপজেলাটির সীমান্তে কালো পাহাড়ের একটি অংশ ধসে পড়ে। এতে কয়েক শত পরিবার ঘর-বাড়ি হারায় ও নষ্ট হয় আবাদি জমি।

স্থানীয়দের তথ্যমতে, এক সময় চৈত্র মাসে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকাগুলোর নদ-নদী ও হাওড়ে ১০-১৫ হাত পানি থাকতো। এখন সেগুলো  নিয়েছে বালু চরে রুপ। আর নাব্যতা কমে নদীর পরিবর্তন হচ্ছে দিকও।

পরিবেশবিদরা বলছেন, উজান থেকে আসা পাথর ও বালুর এ ঢল প্রতিরোধ করা কঠিন। তবে ছড়াগুলোর বিকল্প পথ তৈরি করে তা নদীতে প্রবাহের ব্যবস্থাপনা করলে ক্ষতির পরিমান কমবে। এজন্য প্রয়োজনে পাশ্ববর্তী দেশের কর্তৃপক্ষকে অবগত করারও পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পিযুস পুরকাস্থ টিটু বলেন, পাহাড়ী ঢলের ফলে অনেক মানুষ আজ গৃহহীন। সেইসঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। পাহাড়ি ঢল বন্ধ করা যাবে না, এটা প্রকৃতি সৃষ্ট। তবে এটি রোধে করণীয় ঠিক করতে বিশেষ গবেষণা প্রয়োজন রয়েছে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে সুনামগঞ্জ বিজিবি-২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মো. মাকসুদুল আলম বলেন, আমরা খুব শিগগিরই সীমান্তে বালু ও পাথর ঢল নিয়ে জেলা প্রশাসকসহ সরেজমিনে পরির্দশন করবো। উর্ধবতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। 

অপরদিকে সংশ্লষ্ট সকল বিভাগের তথ্যের ভিত্তিতে করণীয় ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. শরিফুল ইসলাম ।