যেকোন নগরীতে সুস্থ পরিবেশের জন্য জনপ্রতি সর্বনিম্ন নয় বর্গমিটার সবুজ অঞ্চল থাকা প্রয়োজন, বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
কিন্তু বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার চিত্র পুরোপুরি উল্টো। ঢাকার সবুজ এলাকার পরিমাণ মাত্র ৬ থেকে ৭ শতাংশ। যা জনসংখ্যার বিপরীতেও অপর্যাপ্ত।
সম্প্রতি রিমোট সেন্সিং পদ্ধতি ব্যবহারে করে জাপানের কিয়োটা, হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজউক কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে পরিচালনা করে এই গবেষণা।
যাতে দেখা যায়, ঢাকা শহরে মোট ৯২টি ওয়ার্ডের মধ্যে শুধুমাত্র ৬টি ওয়ার্ডে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সবুজ অঞ্চল রয়েছে।
অন্যদিকে উত্তর সিটি এলাকার সবচে নাজুক অবস্থানে ১, ১৪, ৩০, ২৯ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ড। তবে মান সম্পন্ন ৬টি সবুজ অঞ্চলের ৪টিই উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায়।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে পর্যাপ্ত বনায়ন।
এর আওতায়- মিন্টো রোড, ইস্কাটন গার্ডেন, নিউ ইস্কাটন রোড, কাকরাইল, বেইলি রোড, ডিয়াইটি কলোনি, পশ্চিম মালিবাগ।
আর ২০ নাম্বার ওয়ার্ডের আওতায় আছে ঢাকা মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, পশ্চিম ফুলবাড়িয়া, সচিবালয় এলাকা।
স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, শহরের প্রায় ৯৩ শতাংশ ওয়ার্ডে নেই প্রয়োজনীয় সবুজ অঞ্চল। ১৯৯৫ সালেরও ঢাকায় ১২ শতাংশ সবুজ ছিলো।
তবে ২০১৪ সালের গবেষণায় এই হার নেমে হয় আট শতাংশ। আর এখন সবমিলিয়ে ৬-৭ শতাংশ।
এবারের গবেষণায় অংশ নেন তিনজন গবেষক। এরমধ্যে ছিলেন রাজউকের সহকারি নগর পরিকল্পনাবিদ মো. মুস্তাফিজুর রহমান।
“২০১৪ সালে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আমরা গবেষণাটি পরিচালনা করি। ওই সময় ৯০ শতাংশের বেশি ওয়ার্ডে জনপ্রতি নয় বর্গমিটারের কম সবুজ অঞ্চল পাওয়া যায়,” যোগ করেন মুস্তাফিজুর রহমান।
অবস্থার অবনতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মূলত জমির উচ্চমূল্যের কারণে গাছপালার জন্য জায়গা ছাড়তে চান না মালিকরা।”
তবে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন “আমরা সবাই নাগরিক, কিন্তু আমরা সুনাগরিক কয়জন? একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস হতে পারে অক্সিজেনের বড় উৎস।”
“বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, প্রতিটি দোকানে কমপক্ষে দুটি করে ফুলের টব রাখতে হবে,” উল্লেখ করেন আতিকুল ইসলাম।
যারা ছাদ বাগানের উদ্যোগীদের জন্য বিশেষ রেয়াতের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র।
তবে এতে সুফল মিলবে কতটা?
স্থপতি ইকবাল হাবিব বললেন, “অপরিকল্পিত বনায়নের মাধ্যমে ঢাকা শহরের বনাঞ্চল বৃদ্ধি পাবে না।”
“সিটি কর্পোরেশন নিজস্ব উদ্যোগেই হর্টিকালচারের মতো বিভাগ চালু করলে তা হবে বনায়নের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থাপনা,” উল্লেখ করেন তিনি।