
বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নানান আইন প্রণয়ন করা হলেও নিয়মিত ঘটছে প্রাণী হত্যার ঘটনা। সম্প্রতি এ দেশে এশিয়ান বুনো হাতির প্রতি নির্মমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণে সচেতন মানুষেরা বিভিন্ন মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ গড়ে তুলছেন। এবার বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নিয়োজিত বন বিভাগের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আট দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট।
২৮ নভেম্বর, রবিবার রাজধানীর আগারগাঁও-এর বন অধিদপ্তরের ফটকে বন্যপ্রাণী রক্ষার দাবিতে সম্মিলিত প্রতিবাদের অংশ হিসেবে কর্মসূচিটি পালন করে এ দাবি জানায় ৩৩টি পরিবেশবাদী সংগঠন। এ সময় গান, কবিতা ও হাতির চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানান আয়োজকরা। এ সময় জাতীয় কমিশন গঠনের তাগিদ দিয়েছেন বক্তারা।
এর আগে চলতি মাসে কয়েকদিনের ব্যবধানে সাতটি বুনো হাতি হত্যার ঘটনায় দেশব্যাপী মানববন্ধন করেছন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বেঙ্গল ডিসকাভার টিম ও সম্পাদকের উদ্যোগে তিন বন্যপ্রাণী বিষয়ক এক্টিভিস্ট বাদী হয়ে রিটও করেন উচ্চ আদালতে। এতে আইনী সহযোগিতা দেন একজন ব্যারিস্টার ও তার আইনী প্রতিষ্ঠান। রিটের প্রাথমিক শুনানী শেষে হাতির ১২টি করিডোর সুরক্ষা ও হত্যা বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট বলছে, বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বন্যপ্রাণী হত্যা হচ্ছে, উজাড় হচ্ছে অক্সিজেনের আধার বনভূমি। কিন্তু বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান বন অধিদপ্তর তা ঠেকাতে বরাবরই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কিছুদিন পর ছবিতে আঁকা হাতি দেখিয়ে বলতে হবে এ দেশে এক সময় হাতি ছিল।
দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জনসচেতনতা বাড়াতে দুপুরের পর অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে বাউল গান, গল্প এবং কবিতার ছন্দে তুলে ধরা হয় বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণেরে আহ্বান। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে জীবিত ও মৃত হাতির ছবিও আঁকেন চিত্রশিল্পীরা।
জোটের আহ্বায়ক পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার-এর সভাপতিত্বে ও সমন্বয়ক কেফায়েত শাকিল ও শামস সুমন বিক্ষোভ কর্মসূচির সঞ্চালনা করেন। এতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশারসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছ্বাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

বিকেলে জোটের আহ্বায়কের নেতৃত্বে বন অধিদফতরে অনাস্থাপত্র নিয়ে যান পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রধান বন সংরক্ষক সচিবালয়ে থাকায় তাঁর পক্ষে অনাস্থাপত্রটি গ্রহণ করেন বন সংরক্ষক (অর্থ ও প্রশাসন) হোসাইন মুহম্মদ নিশাদ ও সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক মো. আব্দুস ছালেক প্রধান।
বন্যপ্রাণী রক্ষায় জোটের দাবিগুলো:
হাতি হত্যার ঘটনাগুলোর বিষয়ে নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত ও শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। হাতির কোরিডোর থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করে হাতির আবাসস্থল হিসেবে ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় অবিলম্বে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি নিরপেক্ষ জাতীয় কমিশন গঠন করতে হবে।
বন, বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত বিদ্যমান সকল আইনে প্রাকৃতিক বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন বিভাগের দায়িত্ব ও কর্তব্য স্পষ্টভাবে সন্নিবেশ করতে হবে এবং এ বিভাগের জনাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
বননীতি পরিবর্তন করে বনভূমিতে বাণিজ্যিকরণ এবং এরবিরুদ্ধ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং বনভূমিকে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল এবং সংরক্ষণের স্থানহিসেবে সুরক্ষিত করতে হবে।
প্রতিটি বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনা নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে এবং সেক্ষেত্রে বনবিভাগের ভূমিকা সকলের কাছে স্পষ্ট করতে হবে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
এসডিজি-১৪ এবং ১৫ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুন করে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আর কোনো বনভূমি বরাদ্দ না দেওয়া এবং বন বিভাগের লোকবল ও বরাদ্দ বাড়িয়ে যুগউপযোগি এবং আধুনিক করে গড়ে তোলা।