রহস্যময় সাগরের বিষাক্ত সাপ!

সৌন্দর্য, রহস্য ও জীববৈচিত্রে ভরপুর সমুদ্র। অঘল যেমন সুন্দর ও রোমাঞ্চকর তেমনি ভয়ংকরও বটে। পরিসংখ্যান বলে ধরণীর প্রতি ১০টি প্রাণীর নয়টিই বসবাস করে সাগরে। এরমধ্যে রয়েছে প্রাণঘাতী প্রাণীও। যার অন্যতম হলো সী স্নেইক বা সাগরের সাপ।

বিজ্ঞানীদের মতে, সাগরে প্রায় ৩০ থেকে ৬০ প্রজাতির সাপ আছে। যার প্রায় সবই ‘কোবরা’ গোত্রের। তবে সমুদ্রের সাপের শারীরিক গঠন স্থলভাগের সাপের চেয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম। সামুদ্রিক সাপের সর্বোচ্চ দুই মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের মাথা দেহ অনুপাতে ছোট। সাঁতারের সুবিধার্থে লেজ হয় চ্যাপ্টা। বাতাসে শ্বাস নিতে এরা বারবার পানির ওপরে উঠে আসে। তবে একবার শ্বাস নিয়ে প্রায় তিন ঘন্টা পর্যন্ত জলেরতলে কাটিয়ে দিতে পারে।

ভারত মহাসাগরের অগভীর অঞ্চল এবং প্রশান্ত ও অন্যান্য সাগর-মহাসাগরের উষ্ণতম এলাকায় সী স্নেইক দেখা যায়। সামুদ্রিক সাপ খুবই বিষাক্ত। এরমধ্যে সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ হলো Belcher’s Sea Snake এবং Beaked Sea Snake। দু’টি দেখতে প্রায়ই একই এবং সরু মুখ রয়েছে। বলা হয়, Belcher’s Sea Snake পৃথিবীর সবচে বিষাক্ত সাপ। কেননা এটির বিষ অন্যান্য সাপের তুলনায় অধিক মাত্রায় বিষাক্ত এবং কয়েক মিলিগ্রাম বিষ এক হাজার মানুষকে মেরে ফেলতে পারে।

অপরদিকে Beaked Sea Snake ও মারাত্মক প্রাণঘাতী যার কয়েক ফোঁটা বিষ ৮-১০ জন মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ঠ। তবে ভয়ের কারণ নেই। এরা বিরক্ত কিংবা হুমকির সম্মুখীন না হলে অযথা কাউকে ছোবল দেয় না। এরা বিষ দাঁত দিয়ে বিষ নির্গত করে কিন্তু এই দাত ডুবুরিদের বিশেষ পোষাক ছেদ করার মত বড় না তাই পারেও না।

মজার ব্যাপার হলো, একটু আদর পেলে এই সাপগুলো পোষ মেনে যায়। সাপগুলোর বেশীরভাগ প্রজাতিই ৩০ মিটারের কম গভীর এলাকায় বাস করে যাতে তারা কোরাল রীফ, সাগরের তল এবং ম্যানগ্রোভ অঞ্চল থেকে নিজেদের খাবার সংগ্রহ করতে পারে। এরা মাছ, চিংড়ি ইত্যাদি খেয়ে থাকে।

অধিকাংশ সামুদ্রিক সাপ ডিম পাড়ে না, বরং ডিম তাদের দেহের অভ্যন্তরে পরিপক্ব হয় এবং ডিম ফুটে বাচ্চা হলেই কেবল তা দেহ থেকে বের করে (Ovoviviparous)। তবে লেটিকুডা (laticuda) বর্গের সামুদ্রিক সাপগুলো স্থলে ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় (Oviparous)।