প্রজননকালে অদ্ভুত কাণ্ড ঘটায় এই ধনেশ!

পাকড়া ধনেশ পাখির প্রজননের মুহুর্তে।

পাকড়া ধনেশ, বাংলাদেশে দুর্লভ আবাসিক পাখি। বিচরণ করে সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশস্ত পাতাওয়ালা চিরসবুজ বনে। দেখা যায় পাতাঝরা বনেও। জোড়ায় বা ছোট দলে বিচরণ করে। চমৎকার গড়ন, স্বভাবেও তদ্রুপ। ইংরেজি নাম- ওরিয়েন্টাল পায়েড হর্নবিল; বৈজ্ঞানিক নাম- Anthracoceros albirostris

প্রধান খাবার ফল। তবে পাখির ছানা, ইঁদুর, ছোট সাপ, গিরগিটি ও ব্যাঙ শিকার করে। এপ্রিল থেকে মে পাখিটির ‌প্রজনন মৌসুম। ভূমি থেকে ৮-১০ মিটার উঁচু গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৩টি, বাচ্চা হতে সময় লাগে ২৭-৩০ দিন। মজার বিষয় হচ্ছে- প্রজনন মৌসুমে অদ্ভুত কাণ্ড ঘটায় পাখিটি।

প্রজননের সময় স্বেচ্ছায় গাছের কোটরে অবস্থান নেয় স্ত্রী পাকড়া ধনেশ। তখন পুরুষটি নিজেই কাদামাটি এনে বা নিজের বিষ্ঠা লেপে গাছের কোটরের মুখ বন্ধ করে দেয়। শুধু ছোট্ট একটি ছিদ্র রাখে বায়ু চলাচল ও খাবারের জোগানের জন্য। খাবার জোগান দেয় পুরুষ পাখি।

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নির্জন এলাকায় পাকড়া ধনেশের দল। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা।

ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার পরও খাদ্যের চাহিদা মেটায় পুরুষ পাখিই। বাচ্চা স্বাবলম্বী হওয়ার আগ পর্যন্ত খাবার জোগান দিতে হয় পুরুষ পাখিকেই। বাচ্চারা ফুরফুরে হলে ভিতর থেকে মা পাখি ঠোঁট দিয়ে ঠুঁকে ঠুঁকে মাটির আস্তর ফুটো করে বেরিয়ে আসে।

বড় ধরনের সমস্যা না হলে আজীবন জঙ্গলের একই স্থানে বাস করে পাকড়া ধনেশ। এদের কণ্ঠস্বর কর্কশ। বিশ্বে বিপদমুক্ত হলেও বাংলাদেশে বিপন্ন পাখিটি। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে সংরক্ষিত।

এই পাখিটি উদয়ী পাকড়া ধনেশ নামেও পরিচিত। গড় দৈর্ঘ্য ৯০ সেন্টিমিটার (ঠোঁটের ডগা থেকে লেজের আগা পর্যন্ত)। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির গলায় ফ্যাকাসে নীল পট্টি। পিঠ উজ্জ্বল নীলাভ-কালো। ডানার প্রান্ত ও লেজের ডগা সাদা। লেজের উপরাংশ কালো। বুকের নিচ থেকে লেজের তলা পর্যন্ত সাদা।

চোখের গোলকের চামড়া নীলচে সাদা। ঠোঁট ও ঠোঁটের ওপরের বর্ম হলুদ। চোখ লাল। পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ শ্লেট বর্ণের। স্ত্রী পাখি আকারে ছোট। চোখ বাদামি। ঠোঁট এবং বর্মের অধিকাংশ স্থান কালো। অপ্রাপ্তবয়স্কদের গায়ের রঙ নিষ্প্রভ। লেজ সরু এবং ঠোঁট তুলনামূলক খাটো।

Embed from Getty Images