পরমানু বোমার মতো শক্তিশালী তাপ জমেছে মহাসাগরে

ছবি: সংগৃহীত

২০১৯ সালে বিশ্বের মহাসাগর ইতিহাসের সবচে বেশি উষ্ণতম ছিল বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠ দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে বলেও সতর্ক করেছেন গবেষকরা।

নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সমুদ্র বিশ্বের ৯০ শতাংশের বেশি তাপ শুষে নেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমুদ্রপৃষ্ঠ এই তাপ কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে এবং কতটা বেড়েছে তা পর্যালোচনাসহ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন বিজ্ঞানীরা।

জানা গেছে, এ গবেষণায় গত দশ বছরে পাওয়া সমুদ্রের দুই হাজার মিটার গভীরের তাপমাত্রার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এতেই উষ্ণতার এই সুস্পষ্ট চিত্র পান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের একটি বিশেষজ্ঞ দল নিয়ে গঠিক চীনের ইনস্টিটিউট অব অ্যাটমোসফেরিক ফিজিকস।

তারা জানান, গত বছর বিশ্বের মহাসমুদ্রগুলো অনেক বেশি উষ্ণ ছিল। যার প্রভাব ইতিমধ্যেই চরম আবহাওয়া, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ওপর দেখা যাচ্ছে। অ্যাডভান্সেস ইন অ্যাটমোসফেরিক সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, গত বছর সমুদ্রপৃষ্ঠ ০.০৭৫ বেশি উষ্ণ ছিল। যা ১৯৮১ থেকে ২০১০ সালের চেয়ে বেশি। অর্থ্যাৎ গত কয়েক দশকে সমুদ্রপৃষ্ঠ ২২৮ জেটা জুলস (২৮৮ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন জুলস) শক্তি শোষণ করেছে।

‘ওখানে অনেক শুন্যতা’, বলেন প্রফেসর চেং লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট অ্যান্ড এনভায়রোন্টাল সায়েন্স-আইএপি’র প্রধান গবেষক।

গত ২৫ বছরে সমুদ্রে যে পরিমাণ তাপ জমা হয়েছে, তা জাপানের হিরোশিমার পরমাণু বোমার ৩.৬ বিলিয়ন বোমার বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয়তার সমান। গবেষণায় দেখা যায়, গেল পাঁচবছর সমুদ্র সবচেয়ে বেশি উষ্ণ ছিল।

মিডটার্ম ওয়ামিংয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সমুদ্র বেশি তাপ শোষণ করেছে। পেন স্টেট আর্থ সিস্টেম সায়েন্স সেন্টারের পরিচালক মাইকেল মেন বলেন, এই পরিসংখ্যান মোটামুটি সারাবছর একশ’ হেয়ারড্রাইয়ার বা একশ’ মাইক্রোওয়েভ একটানা চালিয়ে যাবার মতো।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার আহবান জানান হয়। শিল্পায়নের আগ থেকে পৃথিবী মাত্র ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ে খরা, অতিঝড়, বন্যা এবং দাবানলের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করে আসছে।

গবেষণায় লেখকরা জানান, জলবায়ু সংক্রান্ত বিপর্যয়ের একটি যোগসূত্র রয়েছ। যেমন অষ্ট্রেলিয়ার দাবানল বা সমুদ্রপৃষ্ঠে উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া। উষ্ণ সমুদ্র অর্থ হলো আরো বেশি জলীয় বাষ্প, বলেন বিজ্ঞানী মেন। এতে আরো বেশি বৃষ্টিপাত এবং বায়ুমণ্ডলে আরো বেশি জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি উল্লেখ করেন তিনি বলেন, এতে মহাদেশগুলোতে খরার প্রভাব দেখা দেয়া। যার ফলাফল সুমেরু অঞ্চল থেকে শুরু করে আমাজন ও অষ্ট্রেলিয়া ও ক্যালিফোরনিয়ার দাবানল।

সমুদ্রের উষ্ণতার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। গতবছর জাতিসংঘের ইন্টারগভর্ণমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় এই শতাব্দীর শেষের দিকে উপকূলের কয়েক কোটি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা জানান, সমুদ্রের তাপ শোষণের ক্ষমতা রয়েছে। পৃথিবীর মানুষ যদি প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন করে তাপমাত্রা কমিয়ে আনে, তারপরও সমুদ্র উষ্ণ থাকবে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী মেন বলেন, “আমরা যদি কার্বন নির্সরণের মাধ্যমে পৃথিবীপৃষ্ঠ উষ্ণ করতে থাকি, তাহলে এর ৯০ শতাংশ সমুদ্র শুষে নেয়। আমরা যদি তাপ উৎপাদন বন্ধ করে দিই, তাহলে কয়েক শতাব্দী পর সমুদ্রের উষ্ণতা কমে স্বাভাবিক হবে।”