দক্ষিণ এশিয়ার দেশ নেপাল দশ বছরেই তিনগুণ করেছে বন্য বাঘের সংখ্যা। ২৯ জুলাই, শুক্রবার রাজধানী কাঠমান্ডুতে বাঘ সমীক্ষার প্রতিবেদন উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা। বিলুপ্তি থেকে বাঘ প্রজাতিকে রক্ষায় দেশটির সরকারের সকল আন্তরিক প্রচেষ্টার ‘বিজয়’ হিসেবে দেখা হচ্ছে এই অর্জনকে।
বন উজাড়, আবাসস্থলের উপর মানুষের আগ্রাসন ও শিকারের ফলে এশিয়াজুড়ে কমেছে বাঘের সংখ্যা। কিন্তু ২০১০ সালে বাঘ সমৃদ্ধ নেপাল এবং অন্য ১২টি দেশ এ বছরের মধ্যে প্রাণীটির সংখ্যা দ্বিগুণ করতে স্বাক্ষর করেছিল একটি প্রতিশ্রুতিতে। তবে অন্য দেশগুলোর চেয়েও হিমালয় প্রজাতন্ত্রই একমাত্র দেশ, যারা লক্ষ্য পূরণ সক্ষম হয়েছে।
২০২২ সালের জরিপে ৩৫৫টি বাঘ গণনা করেছে নেপাল। এর আগে ২০০৯ সালে দেশটিতে ছিল প্রায় ১২১টি বাঘ। প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা বলেন, “আমরা একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য পূরণে সফল হয়েছি। আমি বাঘ সংরক্ষণে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।”
নেপালের সংরক্ষণকর্মীরা বেঙ্গল ডিসকাভার-কে জানান, নেপালের তেরাই অঞ্চলে রয়েছে সবচেয়ে বড় এবং সুরক্ষিত বারদিয়ার জাতীয় উদ্যান। এই বনের খোলা সমভূমি এবং ঘন ঝোপে এখন প্রায়ই দেখা যাচ্ছে বেঙ্গল টাইগার। এর কারণ বাঘ রক্ষায় সরকার জিরো-পোচিং নীতি গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি এ কাজে সহায়তা করছে নেপালের সামরিক বাহিনীও।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, বারদিয়া জাতীয় উদ্যানের প্রাকৃতিক করিডোরগুলোতে নিয়মিত নজরদারি করে পাচার রোধে কাজ করা ইউনিটগুলো। এতে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারছে বাঘ। উদ্যানের এমন একটি অংশের নাম ‘খাতা’ করিডোর। এটি বারদিয়া জাতীয় উদ্যান ও ভারত সীমান্তের কাতারনিয়াঘাট বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এলাকার সংযোগস্থল। তাই ওই এলাকায় বাঘ ফিরে আসায় ঝুঁকিতে আছে উদ্যানের সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাস করা মানুষেরা।
এএফপি উল্লেখ করে, গত ১২ মাসে নেপালে বাঘের হামলায় মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। অথচ এর আগের পাঁচ বছরে বাঘের হামলায় মৃতের সংখ্যা ছিল মাত্র দশজন। মূলত গবাদিপশু চরানো কিংবা ফল, মাশরুম এবং কাঠ সংগ্রহ করতে জাতীয় উদ্যান বা অভয়ারণ্যে গিয়েই বাঘের হামলার শিকার হয়েছেন গ্রামবাসী। অনেক সময় বাঘ উদ্যান থেকে বের হয়ে লোকালয়ে হামলা করেছে। লোকালয়ে বন্যপ্রাণীর প্রবেশ ঠেকাতে বেড়া দেয়া হলেও শিকারি প্রাণীরা সহজেই তা ডিঙিয়ে যেতে পারে।
সদ্য প্রকাশিত জরিপে নেপালের পাঁচটি জাতীয় উদ্যানে বাঘ বিচরণ করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি বেড়েছে অন্য প্রজাতির প্রাণী যেমন- গণ্ডার, হাতি এবং চিতাবাঘের সংখ্যাও।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিশ্বে এক লাখেরও বেশি বাঘ ছিল। কিন্তু ২০১০ সালে সেই সংখ্যা ৩২’শতে নেমে আসে। ২০১০ সালে নেপাল সরকারের নেয়া বাঘ সংরক্ষণ পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছিলেন অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওসহ নামকরা সেলিব্রিটিরা। এতে পরিকল্পনাটি দ্রুত ফলপ্রসূ হতে শুরু করে। ২০১০ সালে বিশ্ব বন্যপ্রাণী তহবিল ও গ্লোবাল টাইগার ফোরাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে এক শতাব্দীর মধ্যে প্রথমবারের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে বন্য বাঘের সংখ্যা।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড-ডাব্লিউডাব্লিউএফ’র নেপাল প্রতিনিধি ঘানা গুরুং বলেন, দেশের এ অর্জন বিশ্বব্যাপী বাঘ সংরক্ষণে মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে, সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন চ্যালেঞ্জও।
“এখন চ্যালেঞ্জ হল এটি পরিচালনা করা এবং বাঘ-মানুষ সংঘাত কমানো। সমস্যাগুলো হ্রাস করতে আমাদের একটি সমন্বিত পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে,” বলেন ঘানা গুরুং।