
মাস দুই যাবৎ ভাল যাচ্ছে না কদম-শিউলির সংসার। বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার সি-২১ নম্বর এনক্লোজারে তারা বসবাস করছে। বেঙ্গল টাইগার কিন্তু আনা হয়েছে সুদূর আফ্রিকা থেকে। শিউলির ঘরে কদম আসলে শিল্পী মমতাজের মত সেই গানটাও আর ধরে না শিউলি…
“লোকে বলে আমার ঘরে নাকী চাঁদ উঠেছে
নাগো না চাঁদ নয় আমার বন্ধু এসেছে”
অস্থির মনে আমার সামনে হাজির কদম।
“স্যার, আপনাকে এবার বলতেই হচ্ছে ঘরের কথা। বড় অশান্তির মধ্যে আছি।”
– কী হয়েছে কদম? কোন রোগ ব্যাধি শরীরে বাসা বেঁধেছে?
“না স্যার, রোগ ব্যাধি নাই। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সুস্থ আছি। তবে দাম্পত্য কলহ চলছে।”
– হাসালে মোরে। তোমরা তো সংসার করো না। পাশ্চাত্যের দেশের মত লিভ টুগেদার করো। ৫-৭ টা দিন একত্রে থাকতেই অসুবিধা হয়ে যায়। মনুষ্য জাতি কেমনে দাম্পত্য জীবনের সুবর্ণ জয়ন্তি পালন করে?
“এই কারণেই তো আপনারা আশরাফ। আপনাদের বুদ্ধির কারণেই আমাদের আমিত্ব গুলো দিনে দিনে নাই হয়ে যাচ্ছে। ধরুন আপনার ইনব্রিডিং কন্ট্রোল ফর্মুলা। এই ফর্মুলার কারণে আমার চেনা জানা সাথীকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছেন। আর অন্যের সখীরে আমার সাথে দিছেন।
– এতদিন পর এসব কথা আসছে কেন? তোমাদের অপেক্ষাকাল শেষে যখন তোমাদেরকে একত্রিত করলাম যেখানে একে অপরকে গ্রিটিংস জানালে তা তো একটা মডেল।

“স্যার, ইহাইতো কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনি আমাদের গ্রিটিংস ক্যামেরাবন্দী করে সোশাল মিডিয়াতে আপলোড করেছিলেন। আপনি অনেক বাহবা, লাইক, কমেন্ট, শেয়ার ইত্যাদি পেয়েছেন। স্ট্যাটাসের প্রেক্ষিতে কিছু মিডিয়াকর্মী আমাদেরকে সামনে রেখে লাইভ করেছে। এতে শিউলির ভাব বেড়ে গেছে। নিজেকে অনেক বড় মনে করে। আমাকে পাত্তাই দেয় না।
– সুন্দরী বউ থাকলে মনুষ্যকুলেও এই সমস্যা দেখা যায় কম বেশী। আর তোমাদের ক্ষেত্রে তো ফিমেলদের চেয়ে মেইল-ই সুন্দর বেশী। তাও এত ভাব আমার বোধগম্য নয়। মূল সমস্যা কোথায়?
“শিউলি খুব উচ্চ বিলাসী। চাহিদার কোন শেষ নাই। আমি ছোটকাল থেকেই মিতব্যায়ী। এতে যদি আমার অপরাধ হয়, আপনি যে শাস্তি দিবেন তা মাথা পেতে মেনে নিব।”
-মিতব্যায়ী হওয়া দোষের কিছু নয় এর সুফল তুমি মধ্য বয়সে পাবে। সবুর করো, সবুরে মেওয়া ফলে। তবে তোমার গায়ে যাতে হাত না তোলে সেদিকে খেয়াল রেখো। তা নাহলে প্যারাসাইটোলজি, অ্যানেসথেসিওলজি, সার্জারি, মেডিসিন এর মত জটিল ও কঠিন সাবজেক্ট তোমার দুয়ারে হাজির হবে।
“স্যার আমি ব্যাঙ্গল টাইগার, আফ্রিকায় জন্ম। জন্ম হোক যত্র তত্র কর্ম হউক ভাল। আপনার কথা মত চলবো। শুধু দোয়া চাই।”
– সৃষ্টিকর্তা তোমার মঙ্গল করুন। শুধু একটা কথা মনে রেখো। তোমরা বাচ্চা জন্মদাতা কিন্তু বাচ্চার কোন দায় গ্রহণ করো না, বাঘিনীর সকল দায়। সে লালন পালন থেকে শুরু করে শিকারের ট্রেনিং পর্যন্ত দেয়। টিকে থাকার সংগ্রামে জয়ী হতে শিখায়। তারপরেও মনুষ্য জাতি যখন বীরত্ব দেখায় তখন বাঘের বাচ্চা বলে আখ্যায়িত করে। আর বীর বাঙালী তা হাসিমুখে মেনে নেয়। সেই ক্রেডিটের জন্য হলেও টিকে থাকো।
(বাঘের সঙ্গে কথোপকথনের এই লেখাটি কাল্পনিক।)
লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রাণী চিকিৎসক ও আই্ইউসিএনের হরিণ বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য।