মোঘল আমলে শিবাজি ভোসলের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ছোট এক স্বাধীন রাজ্য, মারাঠা রাজ্য। শিবাজি ভোসলের মৃত্যুর পর ১৬৮১ সালে তার বড় ছেলে সাম্বাজি মারাঠা রাজ্যের মহারাজ হন। সাম্বাজি ছিলেন উদার মনের একজন রাজা।
কথিত আছে, ন্যায়পরায়ন সাম্বাজি মহারাজের বাবুর্চি একদিন কাজে আসেননি বা ছুটিতে ছিলেন। বাবুর্চির অনুপস্থিতিতে নিজেই ডাল জাতীয় একটা খাবার রান্না করেছিলেন। যেখানে মসুর ডাল, মুগ ডাল, সব্জী ও কারিপাতাসহ অন্যান্য মসলা ব্যবহৃত হয়েছিল। রাজকীয় এই কুইজিন বা রান্নাটি রাজার সম্মানে তার নামানুসারে সাম্বার রাখা হয়। যা এখনও দক্ষিণ ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয়। দোসা গলাধকরণ হয় না সাম্বার ছাড়া।
এশিয়ার সবচেয়ে বড় হরিণ Rusa unicolor এর নামকরণ করা হয়েছে সাম্বার। ডাল বনাম প্রাচ্যের সর্ববৃহৎ হরিণ (Largest Oriental Deer)। একটু অবাক হওয়ারই কথা। কীভাবে আসলো নামকরণ?
এশিয়া মহাদেশে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং চায়না ছাড়া ভারতীয় উপমহাদেশই বেশি রয়েছে Samar Deer বা সাম্বার হরিণ। ভারতবর্ষে বেশি থাকায় নামকরণ করার ক্ষেত্রে জনপ্রিয় কুইজিন সাম্বারের নামানুসারে রাখা হয়েছে। যে দৃষ্টিকোণ থেকে এই নামকরণ করা হয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে- বিক্রম জিত সিং লিখিত একটি প্রতিবেদনে।
হিন্দুস্থান টাইমস পত্রিকায় ১৩ জুন ২০২০ তারিখে Wildbuzz: What’s in a name that we call sambar শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে Rusa unicolor-এর লোমের রং বাদামী রঙ্গের উপর হলুদের আভা যার সাথে ডাল সাম্বার এর বর্ণের মিল রয়েছে। এজন্যই সাম্বার হরিণ নামকরণ করা হয়েছে। অবশ্য সামবার হরিণের লোম কাদাযুক্ত থাকলে তা বুঝা মুশকিল। শুধুমাত্র পরিচ্ছন্ন সাম্বার হলে বোঝা যায়। আকারে সামবার বিশ্বের ২য় বৃহত্তম হরিণ। তাহলে আকারে বৃহৎ কোন প্রজাতির হরিণ?
বিশ্বের সর্ববৃহৎ হরিণ হচ্ছে আমেরিকান ওয়াপিটি (Wapiti)। যার বৈজ্ঞানিক নাম Cervus canadensis। এটাকে বলে এল্ক (Elk)। আকার আকৃতিতে এল্ক এর সাথে সাদৃশ্য থাকার কারণে সাম্বার হরিণকে ইন্ডিয়ান এল্কও (Indian Elk) বলা হয়। সেজন্যই হয়তো Cervus জেনাসের (গণ) অন্তর্ভুক্ত করে বৈজ্ঞানিক নাম লিখা হতো Cervus Unicolor।
ট্যাক্সোনমিস্টরা মলিকুলার গবেষণায় দেখিয়েছেন, সারভাস সদস্যদের সাথে তাদের জেনেটিক সাদৃশ্য নেই। তাই Sub Genus Rusaকে মূল জেনাসে উন্নীত করে সাম্বারকে Rusa জেনাসে অন্তর্ভূক্ত করেছেন।
সাম্বার হরিণের বৈজ্ঞানিক নাম-১৯৯০ সাল থেকেই Cervus জেনাসের বাইরে এনে Rusa জেনাসে প্রস্তাব করছেন ট্যাক্সোনমিস্টরা। কিন্তু বহুল ব্যবহার দেখা যাচ্ছে ২০০৫ সাল থেকে। পুরনো অনেক নথিতে এখনও Cervus unicolor হিসাবে দেখায়, যা ভুল। Rusa জেনাসভুক্ত প্রজাতিগুলিকে একত্রে Rusa Deer বলা হয়। দুই প্রজাতির সাম্বারকে স্বীকৃতি দিয়েছে আইইউসিএন। এক- সাউথ ইস্ট এশিয়ান সাম্বার- Rusa equinus, দুই- রেসিডুয়াল ইন্ডিয়ান সাম্বার- Rusa unicolor।
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে যে সাম্বার প্রজাতি পাওয়া যায় তা হচ্ছে ইন্ডিয়ান সাম্বার। ইন্ডিয়ান সাম্বারের সাতটি সাব-স্পিসিস রয়েছে। তার মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার টাইপ হচ্ছে Rusa unicolor unicolor।
লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রাণী চিকিৎসক ও আই্ইউসিএনের হরিণ বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য।