বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে বিষ খাইয়ে অর্ধশতাধিক বানর হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে কলার সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছিল বানরদের।
গেল মঙ্গলবার বিকেলে ভারিতিল্লা ঘোনার দেবাঙ্গা পাড়া গ্রামের বাসিন্দারা লাউ ক্ষেতের পাশে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন রেসার্স ম্যাকাক প্রজাতির বানরগুলোকে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, বানরের দল ভারিতিল্যা ঘোনা পাহাড়ের একটি লাউ ক্ষেত নষ্ট করায় কলার সঙ্গে বিষ মাখিয়ে হত্যা করা হয়েছে বানরদের। পাহাড়ি জমিতে কাজ করতে যাওয়ার সময় লাউ ক্ষেতের পাশে মৃত বানরগুলো পড়ে থাকতে দেখেন বলেও জানান তারা।
তারা বলেন, ”বানরগুলো প্রায়ই লাউ ক্ষেত নষ্ট করত। এতে ক্ষেতের মালিক ক্ষিপ্ত হয়ে কলার সঙ্গে বিষ মিশিয়ে রেখে যান। বানরের দল সেগুলো খাওয়ার পর মারা গেছে।”
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন এনভায়রনমেন্ট মুভমেন্টের মহেশখালী উপজেলার সভাপতি দিনুর আলম বলেন, ”বুধবার সকালে বানরগুলো মাটি চাপা দেয়া হচ্ছে বলে আমরা জানতে পারি। অপরাধের প্রমাণ মুছে ফেলতে এটা করেছে। বানর হত্যার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হোক।”
মহেশখালী বন রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. সাদেকুল ইসলাম বলেন, ”ক্ষেতে বিষ প্রয়োগের কারণেই বানরগুলো মারা গেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। এভাবে পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য ধংস করাটা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে বড় ধরনের অপরাধ।”
“ঘটনার আসল কারণ জানতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে” উল্লেখ করেন বন কর্মকর্তা মো. সাদেকুল ইসলাম।
বাংলাদেশে বানরের অবস্থা
বিশ্বে প্রাইমেট বর্গের ৭৯ গোত্রের প্রায় ৫০৪ প্রজাতির বানর জাতীয় প্রাণী রয়েছে। ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, এদের ৬০ শতাংশ প্রজাতিই মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। আর ৭০ শতাংশ প্রজাতিতেই সদস্য সংখ্যা কমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ১০ প্রজাতির বানর-নরবানর-হনুমানের অস্তিত্ব জানা যায়।
সবশেষ ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা- আইইউসিএন বাংলাদেশ ১৬শ ১১টি প্রজাতির এ দেশীয় প্রাণীর লালতালিকা হালনাগাদ করে। সে তালিকায় দেশে দশ প্রজাতির বানরের ৯০ শতাংশ অর্থাৎ ৯ প্রজাতি বিপদাগ্রস্ত এবং এক প্রজাতি তথ্য ঘাটতি আছে- এমন শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করে। ঝুঁকিপূর্ণ, বিপন্ন, এবং মহাবিপন্ন- এই তিন শ্রেণীকে বিপদাগ্রস্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কেননা এগুলোর প্রত্যেকেই বিলুপ্তির মুখে রয়েছে। ২০১৫ সালে ঐ দশ প্রজাতির বানরের ছয় প্রজাতিই বিশ্বে বিপদাগ্রস্ত প্রাণীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ বানর সংকটাপন্ন
সহযোগিতার আহ্বান...
ব্যস্ত এই পৃথিবীর প্রতিদিনকার শোরগোলে হারিয়ে যায় শত গল্প, না শোনা থেকে যায় হাজারো কথা। অগণিত বন্যপ্রজাতির ক্ষেত্রেও দৃশ্যটি ভিন্ন নয়। ছোট, বড়, বিপন্ন, বন্যজীবনের জটিলতা ও আকর্ষণীয় গল্পগুলোই আমাদের লেখকদের মূল আগ্রহ। প্রতিটি মুহুর্ত আমরা কাটাই এসবের সন্ধানে। পরিবেশ, বন্যপ্রাণী এবং বিজ্ঞান বিষয়ক সাংবাদিকতা কেবল মাত্র ভালোবাসার টানে শুরু করলেও, নিউজরুম পরিচালনায় প্রতিনিয়ত হার মেনে যায় এই আবেগও। এমন সময় প্রয়োজন হয় সহযোগিতার।
প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর ছবি, ভিডিও এবং তথ্য তুলে ধরার ইচ্ছে নিয়ে পৃথিবীজুড়ে প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণকারী গবেষক, গবেষণা সংস্থা ও সংরক্ষণকর্মীদের সঙ্গে কাজ করছি আমরা। জনসাধারণের সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করি বিপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রাণ-বৈচিত্র্যের তথ্যচিত্র। ওয়েবসাইট ও ম্যাগাজিন দৃষ্টিকটু বিজ্ঞাপনে যাতে ভর্তি হয়ে না থাকে, প্রতিনিয়ত আমরা সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এতে পাঠকের স্বাচ্ছন্দ্য বজায় থাকলেও, আয়ের একটি বড় অংশ কমে যায়। সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে কোভিড-১৯ কালীন অর্থনৈতিক সংকট। তাই আমাদের লেখকদের যথাযথ সম্মানীর পাশাপাশি বিজ্ঞাপনী আয়ের ক্ষতিপূরণের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহবান জানাই। এগিয়ে যেতে চাই একই উদ্দ্যোমে, সঙ্গে চাই আপনাদের সহযোগিতা।
যোগাযোগ: info@bengaldiscover.com