
ভারতের কেরালা রাজ্যে গর্ভবতী হাতিকে হত্যার ঘটনায় যখন তোলপাড় চলছে, তখনই বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হওয়া গর্ভবতী একটি পথ কুকুর মানুষের চিকিৎসা পেয়ে ছয়টি ছানার জন্ম দিয়েছে। ৩রা জুন, বুধবার রাজধানী ঢাকার লালমাটিয়ায় প্রাণী কল্যাণ সংগঠন ’প’ ফাউন্ডেশনের ক্লিনিকে বাচ্চা জন্ম দেয় পঙ্গু কুকুরটি।
জানা গেছে, সম্প্রতি করোনার লকডাউন চলাকালে রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে পড়ে ছিল কুকুরটি। পরে স্থানীয় প্রাণিপ্রেমী সামীর আহমেদসহ কয়েকজন মানুষ কুকুরটি ও তার পেটের বাচ্চাগুলোকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্ট চালান। পরে ‘প’ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সংস্থাটির জরুরি চিকিৎসা সেবার গাড়ি উদ্ধার করে কুকুরটিকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার প্রথম জন্ম নেয়া কালো ছানাটিকে সামনের দুই পায়ে মায়ের পরম মমতায় আগলে রাখছিল পঙ্গু কুকুরটি। বাচ্চাটিকে দুধ পান করাতেও সামনের সুস্থ দু’পায়ে মায়ের আর্তি দেখে ক্লিনিকের কর্মকর্তাদের চোখে জল এনে দিয়েছিল। যারা কুকুরটির সেবা করে আসছিল তারা জানান, পঙ্গু কুকুরটি সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে পারায় তারা বেজায় আনন্দিত।
’প’ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলেন, ”প্রথমদিন চিকিৎসা দিয়ে ফিরে আসলেও দুইদিন পর উপায় না দেখে কুকুরটিকে বন্ধ ক্লিনিকেই নিয়ে এসে রাখা হয়। চলে সেবা দেয়া। এভাবেই প্রায় দুই মাস পার হয়ে গেলেও কুকুরটি উঠে দাঁড়াতে পারেনি। প্রথমে ভাবা হয়েছিল পেটের বাচ্চাগুলো হয়তো মারা গিয়েছে। গত দুইদিন ধরে পেটের ভিতর বাচ্চাগুলো নড়ছিল। অবশেষে আজ দুপুরে (৩ জুন) প্রথম বাচ্চাটি প্রসব করে পঙ্গু কুকুরটি। এরপর আরো পাঁচটি ছানার জন্ম দেয় কুকুরটি।”
”অসহায় অবস্থাতেও নিরীহ প্রাণীটি সদ্যজাত শিশুটির কান্না শুনলে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। আশেপাশে তাকিয়ে মানুষের সাহায্য চাইছে,” যোগ করেন এমিল।
বলেন, “পৃথিবীতে মানুষ চাইলে কোন গর্ভবতী হাতিকে চতুরতা আর নিষ্ঠুরতা করে আতশবাজি খাইয়ে পেটের বাচ্চাসহ মেরে ফেলতে পারে। আবার চাইলে এক অসহায় পঙ্গু গর্ভবতী কুকুরকে সেবা শুশ্রূষা দিয়ে বাচ্চা জন্ম দিতে এবং বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। এই কুকুরটি এবং কেরালার হাতিটি যেন একই দিনে পৃথিবীর বুকে মানুষের মানবতা আর পাশবিকতার দ্বান্দ্বিক চিত্র দেখিয়ে দেয়।”
প্রসঙ্গত, ভারতে নৃশংসভাবে গর্ভবতী হাতি হত্যার ঘটনায় মধ্যেই বাংলাদেশে পঙ্গু কুকুরের প্রতি যে ভালোবাসা দেখিয়েছে মানুষ, তা নি:সন্দেহে অনন্য এক উদাহরণ হয়ে থাকবে।