ক্ষুদ্র মৌমাছি থেকে বনাঞ্চল, বাদ যাচ্ছে না কিছুই!

সাগর পাড়ে কাছিম। ছবি: শরীফ সারওয়ার, মেরিন ফটোগ্রাফার, বাংলাদেশ

ক্ষুদ্র মৌমাছি থেকে শুরু করে বন্যার পানি ধরে রাখতে সহায়ক বনাঞ্চল, কোন কিছুই বাদ যাচ্ছে না।মানুষের বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে প্রভাব পড়ছে সবকিছুতেই।

সম্প্রতি তিন বছরের গবেষণা শেষে ১৫ হাজার তথ্যসূত্র নিয়ে ১৮০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘের ‘ইন্টারগভার্নমেন্টাল সায়েন্স পলিসি প্ল্যাটফর্ম অন বায়োডাইভারসিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিস’।

চলতি বছরের ৬ মে মাসে ওই প্রতিবেদনের ৪০ পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপ ‘সামারি ফর দ্য পলিসিমেকার’ প্রকাশিত হয় প্যারিসে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আকাশ, পাতাল কিংবা সাগর, সবখানেই প্রকৃতির ওপর মানুষের কর্মকাণ্ডে বিপন্ন করে তুলেছে দশ লাখ প্রজাতির অস্তিত্ব। হুমকির মুখে ১০ লাখ প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি। প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতি এমন দ্রুতগতিতে ঘটছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।

এর বড় কারণ হিসেবে মানুষের খাবার ও জ্বালানির চাহিদার বিষয়টি উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

“এখনো সময় আছে; চাইলেই এমন পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব,” মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য প্রকৃতি ও মানুষের আন্ত:সম্পর্কের প্রতিটি স্তরে প্রয়োজন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।

প্রতিবেদনে ইতিহাস বিশ্লেষণ করে বলা যায়, প্রকৃতি সবসময়ই মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে দুর্ভোগ সহ্য করেছে। যা বিগত ৫০ বছরে আরো প্রকট হয়েছে।

১৯৭০ সাল থেকে বিশ্বের জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ, বিশ্ব অর্থনীতির পরিসরও বেড়েছে চারগুণ এবং দশগুণ বেড়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য।আর ১৯৯২ সালের পর থেকে এখন নগরায়ণের হার দ্বিগুণ।

বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও বিদ্যুৎ সরবরাহে উদ্বেগজনক হারে ধ্বংস করা হচ্ছে বন, বিশেষ করে ক্রান্তীয় অঞ্চলগুলোতে। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে ১০ কোটি হেক্টর ক্রান্তীয় বন। যা হয়েছে দক্ষিণ আমেরিকায় গবাদি পশু চরানো এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাম তেল উৎপাদনের কারণে।

বৈশ্বিক হিসেব অনুযায়ী, গড়ে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি এখন ঝুঁকির মুখে আছে। তবে পতঙ্গের ক্ষেত্রে সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও নজরে এসেছে দ্রুত কমে যাবার বিষয়টি, যা নথিবদ্ধ করা হয়েছে।

নথিই প্রমাণ করছে, কয়েক দশকের মধ্যেই প্রায় ১০ লাখ প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। যা গত এক কোটি বছরের গড় বিলুপ্তির হারের চেয়ে শত থেকে হাজারগুণ বেশি।