অবশেষে নীরবেই মারাই গেল ঢাকা চিড়িয়াখানায় অসুস্থ হওয়া সিংহটি। এক সপ্তাহ আগে সিংহটি মারা গেলেও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ নীরবেই ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে আজ বুধবার (১০ জুলাই) বন্যপ্রাণী বিষয়ক সংবাদিক ও প্রাণীপ্রেমিদের কাছে ফাঁস হয়ে যায় ঘটনাটি। এরপরই শুরু হয় দৌঁড়ঝাপ।
শুরুতে ঠিক কখন মারা গেছে এই বিষয়ে কোন সদুত্তর দেয়নি চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এস এম নজরুল ইসলাম। প্রাণীসম্পদ অধিপদপ্তরের মহাপরিচালক হীরেশ রঞ্জন ভৌমিকও সিংহের মৃত্যু হয়েছে- এমন খবর তাঁর জানা নেই বলে মন্তব্য করেন।
তবে এক পর্যায়ে দুপুরের দিকে সিংহটির মৃত্যুর বিষয় সাংবাদিকদের কাছে নিশ্চিত করেন কিউরেটর ডা. এস এম নজরুল ইসলাম। তবে কখন সিংহ মারা গেছে এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমার মনে নেই।” তবে বারাবর প্রশ্নের জবাবে এক পর্যায়ে বলেন, “আনুমানিক দু’সপ্তাহ আগে মারা গেছে সিংহ।” কিন্তু কীভাবে মারা গেল বা ময়নাতদন্তের বিষয়ে কোন তথ্যই দেননি কিউরেটর।
অল্প বয়সে অসুস্থ হয়ে সিংহ মারা যাবার ঘটনায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন প্রাণীপ্রেমিরা। ঢাকাভিত্তিক প্রাণী কল্যাণ সংস্থা পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেরার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল বলেন, “যেহেতু বারবার চিড়িখানার খাবার নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন উঠছে তাই আমাদের প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক। তার ওপর এটা মানতে হবে এখানে দায়িত্বশীলদের চরম অবহেলা ছিল। এর আগেও আমরা কুমিল্লাতে একই ঘটনা দেখেছি।”
বাংলাদেশের ৭১ টেলিভিশনের বন্যপ্রাণী বিষয়ক সাংবাদিক হোসেন সোহেল তাঁর সোর্সের বরাত দিয়ে জানান, “গেলো বুধবার (৩ জুলাই) সিংহ হীরা মারা যায়, বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত করা হয় বলে নিশ্চিত হয়েছি। তবে কর্তৃপক্ষ এখনো কোন প্রাতিষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি।” “ময়না তদন্তে সিংহের পায়ে ক্ষত ছিল, যেটি সাফারি পার্ক থেকে আনার সময় আঘাতে হয়েছিল। এছাড়া সিংহের পাকস্থলীতে দু’টি টিউমার পাওয়া গেছে” সোর্সের বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন হোসেন সোহেল।
২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে জন্মগ্রহণ করে সিংহ হীরা। জন্মের পর স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠছিল। দুই বছর বয়সেই শক্তি আর ক্ষিপ্রতায় পরিপূর্ণ হয়ে আফ্রিকান সিংহ হিসেবে হুঙ্কার ছাড়তে শুরু করেছিল হীরা। এমনকি ২০১৮ সালের শুরুতে সাফারি পার্কের একটি শক্ত লোহার গেট ভাঙার চেষ্টা করে সিংহটি। কিন্তু সেই শক্তশালী সিংহ মাত্র তিন বছরেই মারা যায়। উল্লেখ্য, সিংহের গড় আয়ু প্রায় ২০ বছর। বাংলাদেশের প্রাণীপ্রেমীরা খাবার ও চিকিৎসার অভাবেই সিংহটি মারা গেছে বলে দায়ী করছেন। তবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলেছে, সিংহটির জন্মগত ত্রুটি ছিল। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা ও খাবার দেয়া হয়, এমনকি প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়েও সিংহের স্বাস্থ্য বিষয়ে নিয়মিত অবগত করা হচ্ছিল।
এদিকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সাবেক প্রকল্প পরিচালক সফিউল আজম জানান, জাতীয় চিড়িয়াখানায় হস্তান্তরের সময় সুস্থ ছিল সিংহটি। জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২ মে সাফারি পার্ক থেকে সিংহটিসহ মোট ৪টি সিংহ ও দুটি ভাল্লুক দেয়া হয় চিড়িয়াখানায়। এর আগে জুনের শেষে অসুস্থ সিংহকে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ প্রদর্শন অব্যহত রাখার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। পরে বাধ্য হয়ে সিংহের খাঁচা আড়াল করা হয়।
বাংলাদেশের চিড়িয়াখানায় বেশ কয়েক বছর ধরে অব্যস্থাপনার চিত্র উঠে আসার পর থেকেই প্রাণীপ্রেমিরা দেশের সমস্ত চিড়িয়াখানা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। আর এবার সিংহের মৃত্যুতে সেই দাবি আরো জোড়ালো হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।