পোষা প্রাণী থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ায়?

ছবি: বেঙ্গল ডিসকাভার

করোনা ভাইরাসে যখন নাকাল বিশ্ব, তখন তর্ক-বিতর্ক চলছে পোষা প্রাণী থেকে ভাইরাসটি ছড়ায় কিনা। ব্রিটিশ প্রাণীবিদরা জানান, পোষা প্রাণি থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার খুব কম। তবে সাবধান থাকাটা উত্তম।

এক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে বিড়ালসহ পোষা প্রাণীকে ঘরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞরা। ব্রিটিশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশন বলছে, পোষাপ্রাণীর মালিকদের দুশ্চিন্তার কিছু নাই, তাদের পোষ্য থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি নেই।

হংকং সিটি ইউনিভার্সিটির ডাক্তার এনজেল অ্যালমেনড্রোস জানান, কোভিড-১৯ পোষা কুকুর ও বিড়ালের মাধ্যমে মানুষকে সংক্রমিত করেছে এমন কোন প্রমাণ নেই। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, এক বিড়াল সম্ভবত অন্য বিড়াল থেকে ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে। এজন্য পোষা প্রাণীর বিষয়ে মালিকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ব্রিটিশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েলা ডস স্যান্টস।

তিনি জানান, মানুষের হাত থেকে ভাইরাস পোষা প্রাণীর লোমে যেতে পারে। এজন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সবসময় হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। কুকুর বা বিড়ালকে ঘরে রাখতে হবে। অপ্রয়োজনীয় স্পর্শ ও জড়িয়ে ধরা বা মুখে আদর করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

ডাক্তার এনজেল অ্যালমেনড্রোস বলেন, সম্প্রতি একটি খবরে জানা যায় হংকংয়ে ১৭ বছর বয়স্ক একটি কুকুর কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছে। কুকুরটি তার মালিকের দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে। যদিও পজেটিভ ফলাফল এসেছে তবে প্রাণীটি অসুস্থ হয়ে পড়েনি। এরপর নিউইয়র্কে চিড়িয়াখানার একটি বাঘ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে।

২০০৩ সালে হংকংয়ে সার্স মহামারির সময় অনেক প্রাণী সংক্রমিত হয়েছিল কিন্তু অসুস্থ হয়নি। এমনকি কোন প্রমাণও নেই যে তারা মানুষকে সংক্রমিত করেছে। বেলজিয়ামের একটা ঘটনায় দেখা গেছে, একটি বিড়াল কোভিড-১৯ পজেটিভ হয়েছে। তার মালিকের সংক্রমণের এক সপ্তাহ পর। চীনের ল্যাব টেস্টে এটা প্রমাণিত একটি বিড়াল আরেকটি বিড়ালকে ভাইরাস ট্রান্সমিট করে। এছাড়াও মানুষ থেকে প্রাণীতে ভাইরাস যেতে পারে।

গবেষকরা ধারণা করেছেন, করোনা ভাইরাস যেভাবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে তাতে মানুষের দ্বারা বন্যপ্রাণীও আক্রান্ত হতে পারে। এতে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীরা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হতে পারে। তাই পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ব্রোনক্স চিড়িয়াখানায় একটি বাঘ করোনা আক্রান্ত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চিড়িয়াখানার সংরক্ষকের মাধ্যমেই সংক্রমিত হয়েছিল বাঘটি। এতে গবেষকরা ধারণা করেন, করোনা ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হওয়ায় অন্য প্রজাতিও হুমকির মুখে পড়েছে। এজন্য মানুষকে সচেতন হতে হবে। তার পোষা প্রাণীর বিষয়ও সতর্ক থাকতে হবে।

এদিকে, মহামারি ভাইরাসটি প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়েছে, এ তথ্যটি এমনভাবে ছড়িয়েছে যেন মানুষ ভাইরাস আক্রান্ত প্রাণীটি খেয়েই সংক্রমিত হয়েছেন। যদিও এখনো প্রমাণিত হয়নি।

পোষা প্রাণীকে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ডাক্তার এনজেল অ্যালমেনডারস পরামর্শ দিয়েছেন তাদের ঘরে রাখার। তিনি বলেন, নিজের পরিবারের অন্য সদস্যদের মতো পোষাপ্রাণীরও যত্ন নিতে হবে। যদি আপনি আক্রান্ত হন তাহলে ওই পোষা প্রাণী থেকে দূরে থাকুন। তাহলে প্রাণীর মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করা যাবে।