ঢাকার নদী রক্ষা প্রকল্পে নয়ছয়ের অভিযোগ!

নদীর মধ্যেই নির্মিত সীমানা পিলার। ছবি: রিভার এন্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টার-আরডিআরসি, বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদী দখল হওয়া থেকে রক্ষা করতে সীমানা পিলার নির্মাণ করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু স্থাপিত পিলারের ১৪শ ২৩টিই ভুল জায়গায় নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি রিভার এন্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টার-আরডিআরসি নামক একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে এ অভিযোগ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “দখল রোধ করতে বিআইডব্লিউটিএ বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদের সীমানায় তিন হাজার ৮৪টি পিলার স্থাপন করে, যার মধ্যে ১৪শ ২৩টি নদীর মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে। এই ভুল কারণ নদীগুলোকে সরু করে উলটো দখলদারের সুবিধা করে দেয়া হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদীর পশ্চিম প্রান্তে ২২৮টি এবং পূর্ব প্রান্তে ৮৪টি মিলিয়ে ৩১২টি পিলারের অবস্থান ভুল। তুরাগ নদের এক হাজার ১১১টি ভুল পিলারের মধ্যে পূর্ব প্রান্তে রয়েছে ৪০৯টি ও পশ্চিমের বন্যাপ্রবণ এলাকায় রয়েছে আরো ৭০২টি।

এতে আরো বলা হয়, ”২০০৯ সালে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ঢাকার চার নদী হতে দখলদার উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়া হয়। টেকসইভাবে দখল্মুক্ত করার উদ্দেশ্য সীমানা পিলার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এই অনুযায়ী তৎকালীন গাজীপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীতে প্রায় ছয় হাজার পিলার স্থাপন করেন। যেগুলোর অধিকাংশই নদীতে বা তীরেই স্থাপন করা হয়।”

সংস্থাটির দাবি, ভুল বিষয়টি নিয়ে শোরগোল হলে ২০১৪ সালে একজন ডেপুটি সেক্রেটারির নেতৃত্বে গঠিত কমিটি একটি রিপোর্ট পেশ করে। এতে পিলার স্থাপনার ভুলের দিকটি উঠে আসে। পরবর্তীতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে বিআইডব্লিওটিএকে নদী দখল মুক্ত করে নতুন করে সীমানা পিলার স্থাপনের দায়িত্ব দেয়া হয়। গবেষণায় আরো ৩৯০টি পিলার বিতর্কিত রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এমনকি কোথাও কোথাও পোর্ট আইন ১৯৬৬ ও বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩ না মেনে পিলার নির্মাণের অভিযোগও করা হয়েছে।

সংস্থাটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “পিলার নির্মাণে ভুল নিয়ে দ্বিতীয় দফায়ও একই অভিযোগ উঠলে ২০২০ সালের ১৫ই অক্টোবর আরডিআরসি’র পক্ষ থেকে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। এ সময় বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর প্রায় ৩৭ কিলোমিটার ঘুরে সীমানা পিলারগুলো সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ বছরের জানুয়ারির শুরুতে জরিপের ফল বিশ্লেষণ করে তৈরি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে পিলার স্থাপনের ভুলগুলো দুর্নীতি প্রকাশ করছে। যা দখলেরও সুযোগ করে দিচ্ছে দখলদারদের।”

তবে পিলারের অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকল্পটির পরিচালক নুরুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, “নদী নিয়ে গবেষণা করার এখতিয়ার ওই বেসরকারি গবেষণা সংস্থার (আরডিআরসি’র) নেই।”

তিনি বলেন, “সরকারি ভূমি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে দক্ষ গবেষকদের সহায়তায় নদীর সীমানা নির্ধারণ করা হয়, যাতে ৩-৪ বছর সময় লেগেছে। এই জরিপ মেনেই পিলার স্থাপন করা হয়েছে। কয়েক মাসের গবেষণার উপর ভিত্তি করে দেয়া রিপোর্ট মেনে উন্নয়ন প্রকল্পকে ভুল মানার কোনো যথার্থতা নেই।”

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান হাওলাদার জানান, “বিআইডব্লিউটিএ নদীর সীমানা নির্ধারণের সময় নদী কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তা না নিয়ে করায় এই প্রকল্পে সরকারি অর্থ অপচয় হয়েছে এবং তৈরি হয়েছে নদী দখলের সুযোগ।”

দখল-দূষণে জর্জরিত নদী রক্ষা এবং পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নানা উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। উচ্ছেদ অভিযান, ভূমি উদ্ধার, ওয়াকওয়ে ও ইকোপার্কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ এসব প্রকল্পের মধ্যে আনা হয়েছে।