‘ব্যাঙ’ একটি শীতল রক্তবিশিষ্ট উভচর প্রাণী। বসবাসের জন্য নিম্ন তাপমাত্রার জায়গাগুলো বেছে নেয় প্রাণীটি। তাই প্রজননের তাগিদে ব্যাঙকে প্রথম দুটি ধাপ কাটাতে হয় পানিতে। এজন্যই বাড়ির আশে পাশে ঝোপঝাড়, পুকুর, ডোবা, স্যাঁতসেঁতে ও ভেজা জায়গাগুলোতে সহজেই দেখা যায় ব্যাঙ।
খাদ্যশৃঙ্খলে বিশেষ ভূমিকা সঙ্গে বজায় রাখে পরিবেশের ভারসাম্য। পরিবেশের একটি জৈব সূচকও ব্যাঙ। খুব সহজেই পরিবেশের অবস্থার কথা জানান দেয় প্রাণীটি। ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে রক্ষা করে ফসল। কিন্তু মানুষের অসচেতনতার কারণে দিন দিন কমছে ব্যাঙ ও এর প্রজাতি সংখ্যা। আবাসস্থল ধ্বংস, ফসলে কীটনাশক ব্যবহার, দূষণ এবং রাস্তায় পিষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে ব্যাঙ।
ব্যাঙ এবং ব্যাঙের আবাসস্থল সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ৩০ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস। গেল ৩০ এপ্রিল থেকে ২২ মে ১৪তম দিবসটি আয়োজন করে বিভিন্ন সংগঠন। দিবসটি ঘিরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের নেচার স্টাডি এন্ড কনজারভেশন ক্লাবেও ছিল নানা আয়োজন।
ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস ২০২২’র উপলক্ষ্যে অনলাইন ওয়েবিনারে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির নেচার স্টাডি এন্ড কনজারভেশন ক্লাবের সদস্যবৃন্দ, শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ গবেষক এবং প্রকৃতি প্রেমিরা। এতে বাংলাদেশের ব্যাঙের চিত্র তুলে ধরেন আয়োজক সজীব বিশ্বাস। ব্যাঙের অবস্থা, গবেষণা এবং হুমকি নিয়ে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান। ব্যাঙ এবং সংস্কৃতির সম্পর্ক বিষয়ে বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. অনির্বাণ সরকার।
সাতছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিসহ বিভিন্ন স্লোগানে ব্যাঙয়ের হুমকি এবং এদের স্বভাব তুলে ধরা হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবসকে শিক্ষণীয় করতে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাঙের মাস্কট প্রদর্শনী করা হয়। এতে ব্যাঙয়ের পরিচয়, ব্যাঙের আচরণসহ ব্যাঙের ডাক নিয়ে আলোচনা করা হয়।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যাঙের দেহের রঙ, ব্যাঙের ডিম কেমন থাকে, ব্যাঙের ব্যাঙ্গাচি কেমন ইত্যাদি ধারণাও দেয়া হয়। প্রতিযোগীতায় চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছিল। প্রতিযোগিদের মাঝে পেন্সিল, রাবারসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ প্রদান করা হয়। এতে দুই শ্রেণির মোট ৩১ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে বিচারকদের মাধ্যমে তিনজনকে নির্বাচন করা হয়। তাদের ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট দেয়া হয়।
প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় হয় যথাক্রমে প্রতিক কর্মকার (পঞ্চম শ্রেণি), বেদনা মুন্ডা (চতুর্থ শ্রেণি)এবং উজ্জল গোয়ালা (পঞ্চম শ্রেণি)। এছাড়া ব্যাঙ দৌড় প্রতিযোগিতা, ব্যাঙ গ্রুমিং ও নাটিকা প্রদর্শিত হয়। এতে গ্রাম বাংলার ফসলের খেতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ব্যাঙের হুমকি এবং পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে সচেতন করা হয়।