গল্প বইয়ের ‘বাঘমামা’ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের জার্সির যে বাঘের সঙ্গে আমরা খুব পরিচিত, সেটিই রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
আমাদের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার, আমাদের ঐহিত্য। এটি সুন্দরবনের অনন্য প্রাণ। দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি ভয়ংকর। এর চালচলনও রাজার মতো। ভেজা স্যাঁতসেঁতে গোলপাতার বনে ঘুরে বেড়ায়। শিকার করে বনের নানা জীবজন্তু, সুযোগ পেলে মানুষও খায়।
একসময় সুন্দরবনে চিতাবাঘ ও ওলবাঘ ছিল। কিন্তু এখন আর সেগুলো দেখা যায় না।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল ও ভুটানে বন জঙ্গলে দেখা মিলে এ প্রাণীর। বনের এ অমূল্য সম্পদ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। সারাবিশ্বে গত একশ বছরে বাঘের সংখ্যা এক লাখ থেকে কমতে কমতে ৪ হাজারের নিচে নেমে এসেছে।
বর্তমানে বিশ্বে মাত্র ১৩টি দেশে বাঘের অস্তিত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানে আছে বেঙ্গল টাইগার; কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড আর ভিয়েতনামে পাওয়া যায় ইন্দো-চায়নিজ টাইগার; মালয়েশিয়া আর মিয়ানমারে মালায়ান টাইগার; ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় সুমাত্রান টাইগার; রাশিয়ান হিমশীতল তুন্দ্রায় সাইবেরিয়ান বা আমুর টাইগার আর চীনে আছে সাউথ চায়না টাইগার। এ ১৩টি দেশকে বলা হয় ‘টাইগার রেঞ্জ কান্ট্রি।
সর্বশেষ তথ্যমতে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘ আছে ১১৪টি। বাংলাদেশ বন বিভাগের “সুন্দরবনের বাঘের অবস্থা-২০১৮” শীর্ষক সমীক্ষা থেকে এমন তথ্য পাওয়া যায়। তবে ২০১৫ সালের এক গণনায় সেই সংখ্যা ছিল ১০৬।
সম্প্রতি বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার একদল বিজ্ঞানী তাঁদের গবেষণায় উল্লেখ করেছেন, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে সুন্দরবন পুরোপুরিভাবে বাঘশূণ্য হবে!
এসব বিভিন্ন কারণে বাঘের সংখ্যা জানার প্রয়োজন পড়ে। প্রায় কয়েকবছর পর পরই সরকারিভাবে বাঘশুমারির প্রকল্পের কথা শোনা যায়। এ শুমারি নানা পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়।
পাগমার্ক পদ্ধতি:
যেসব পদ্ধতিতে বাঘ গণনা হয়ে আসছে তার মধ্যে প্রাচীন পদ্ধতি হলো পাগমার্ক। ১৯৭০ সালে ভারতের এক বনরক্ষক ধারণা করলেন, প্রতিটি বাঘের পায়ের ছাপ বা ‘পাগমার্ক’- ই আলাদা। বাঘ সাধারণত নিদির্ষ্ট ট্রেইল ধরে চলাচল করে। সেসব অঞ্চলে পায়ের ছাপ গণনা করা হয়। এ পদ্ধতিকে বলা হয় পাগমার্ক সেনসাস।
খাল সার্ভে পদ্ধতি:
২০০৭ সালে খাল সার্ভে নামে বাঘশুমাটির আরেকটি পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ বন বিভাগ এবং ওয়াইল্ড ট্রাস্ট। সুন্দরবনে জালের মতো বিছিয়ে রাখা অসংখ্য খালে ছোট ছোট নৌকায় করে ছড়িয়ে পড়ে বাঘ গোনা বাহিনী। খালের ধারে ঘুরে বেড়ানো বাঘের পায়ের ছাপ গুণে সংখ্যা নিশ্চিত করে।
ক্যামেরা ট্র্যাপ পদ্ধতি:
বাঘ সাধারণত নির্দিষ্ট ট্রেইল ধরে চলাচল করে। বনের যেসব জায়গায় বাঘ পানি খেতে যায় সেখানে ছড়িয়ে দেয়া হয় বিশেষ ধরনের ক্যামেরা। ক্যামেরার সামনে যা কিছুই নড়াচড়া করবে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে তারই ছবি ধারণ করবে। বাঘের ডোরা কাটা দাগের ধরণ আঙ্গুলের ছাপের মতোই স্বতন্ত্র। তাই বাঘের ডোরা কাটা দেখে প্রতিটা বাঘকে আলাদা করা যায়।
সুন্দরবনের এন্ডেমিক প্রাণী এই বাঘের সংরক্ষণ আমাদের দেশের জন্য এক যুগোপযোগী কাজ। যা হারিয়ে গেলে হয়তো ঐতিয্য পড়বে হুমকির মুখে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
***প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বেঙ্গল ডিসকাভার কর্তৃপক্ষ লেখকের মতামতের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।