প্রকৃতি যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে তার প্রভাব কতটুকু বিস্তৃত এই ধরণীজুড়ে। টানা ছয় মাস দাবানলের আগুনে জ্বালানোর পর এবার ভারী বর্ষণ ও বন্যায় ভাসিয়ে নিচ্ছে অস্ট্রেলিয়াকে। গত কয়েক মাস ধরে জ্বলা ভয়াবহ দাবানল ও তাপদাহের পর গেল শনিবার অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল শুরু হওয়া ভারী বর্ষণে বন্ধ হয়েছে বিপর্যস্ত দেশটি।
বন্যার কারণে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কুইন্সল্যাণ্ডের প্রধান সড়কগুলো। আর নিউ সাউথ ওয়েলসেও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। কুইন্সল্যাণ্ডের আবহাওয়া ব্যুরো জানায়, এ পর্যন্ত ১০০ মিলি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রাজ্যের কয়েকটি এলাকায় তিনগুণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। কিছু আবাসিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কিছু পার্ক ও দর্শনীয় স্থান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে কয়েকটি বনাঞ্চলে দুর্ভোগে পড়েছে দাবানলের আগুনে বেঁচে যাওয়া বন্যপ্রাণীরা। বিভিন্ন টেলিভিশনের খবরে দেখা যায়, পানির স্রোতে ভেসে যাওযা থেকে ওইসব এলাকার প্রাণীদের উদ্ধার করছেন কর্মীরা। তবে প্রবল বর্ষণের পরও কমপক্ষে ১০০টি জায়গায় দাবানলের সাথে লড়ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-নাসা জানায়, দাবানলের কারণে সৃষ্ট ধোয়া পুরো পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়ছে। নিউ সাউথওয়েলসে কর্তৃপক্ষ জানায়, এই বর্ষণ রাজ্যের ৭৫ জায়গায় জ্বলা দাবানল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। যদিও আরো ২৫ এলাকা এখনো একদম নিয়ন্ত্রণে আসেনি। টুইট বার্তায় বলা হয়, এই বৃষ্টি সবগুলো দাবানল একদম নিভিয়ে দিবে না। তবে সামাল দিতে সাহায্য করবে।
এদিকে যেখানে দাবানল নিভে যাচ্ছে সেখানেই হারিয়ে যাওয়া প্রাণিদের খোঁজ করছেন পরিবেশবাদিরা। এই দাবানলে অন্তত ১০০ কোটির বেশি প্রাণী বিলুপ্তির মুখে। সংরক্ষণকর্মীরা আশা, যদি কোনভাবে বিলীন হওয়া প্রাণীদের আবারো প্রকৃতিতে ফিরিয়ে আনা যায়। এরমধ্যে রয়েছে কোয়ালা, ক্যাঙ্গারু এবং ওয়ালেবি জাতীয় ইঁদুর। যা একমাত্র অস্ট্রেলিয়াতেই বিচরণ করে।
কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশবিদ কিংসলে ডিক্সন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানায়, অস্ট্রেলিয়া এমন দুর্ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। যেখানে এতো ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে এবং এতো বিপুল সংখ্যক প্রাণীকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলেছে।
আগুন নির্বাপন কর্মীরা প্রাচীন ডায়নোস বৃক্ষ সংরক্ষণ করতে সচেষ্ট হয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তহবিল সংগ্রহের পাশাপাশি বন্যপ্রাণি সংরক্ষণের কাজও চলমান দেশটিতে।