বাংলাদেশে নয়া ‘গিটারফিশ’ শনাক্ত!

বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় বিশ্বে প্রথমবারের মতো নয়া প্রজাতির ’গিটারফিশ’ শনাক্ত করেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এ নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে দু’বছর বিশ্ববিদ্যালয়টির ফিশারিজ বায়োলজি এন্ড জেনেটিক্স বিভাগের একোয়াটিক বায়োরিসোর্স রিসার্চ ল্যাবরেটরি পরিচালনা করে গবেষণাটি। প্রকৃতি ও প্রাণী সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সংস্থা-আইইউসিএনের মহাবিপন্ন প্রাণীর তালিকায় রয়েছে ‘গিটারফিশ’।

২৯ জুন, মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী জ্যুট্যাক্সা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণা প্রবন্ধ। এটি লিখেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্সের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী আহসান হাবিব এবং সহকারি গবেষক মো. জায়েদুল ইসলাম। তারা গিটারফিশ শনাক্তকরণের এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন।

সদ্য আবিষ্কৃত গিটারফিশ প্রজাতিটি বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় ডিএনএ বারকোডিংয়ের মাধ্যমে হাঙর ও শাপলাপাতা জাতীয় মাছের ওপর চলমান একটি গবেষণার সময় পাওয়া যায়। প্রজেক্টটিতে অর্থায়ন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন।

অধ্যাপক কাজী আহসান হাবিব জানান- গিটারফিশ রাইনোবেটিফরমিস বর্গের, গ্লুকোসটেগিডি পরিবারের এবং গ্লুকোসটেগাস গণের একটি প্রজাতি। গ্লুকোসটেগিডি পরিবারের প্রজাতিগুলোকে জায়ান্ট গিটারফিশ বলা হয়। এ পর্যন্ত পৃথিবীতে জায়ান্ট গিটারফিশের আটটি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। দুটি প্রজাতি ছাড়া বাকি সকল গিটারফিশরা সামুদ্রিক লোনা পানিতে বসবাস করে। তবে দুটি প্রজাতি মাঝে মাঝে ইষৎ লোনা পানিতে আসে। দেখতে গিটারের মত হওয়াতে ’গিটারফিশ’ বলা হয়। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গিটারফিশ সংরক্ষরণে এখনই যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে এটি দ্রুত বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গবেষকরা জানান- দেহের গঠন, বাহ্যিক আকৃতি এবং ডিএনএ বারকোডিং পদ্ধতি ব্যবহার করে গিটারফিশ প্রজাতিটি শনাক্ত করা হয়। ৭৩০ থেকে ৯৩৩ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে এটি। বাদামী বা ধূসর রঙের চ্যাপ্টা ধরনের মাথা প্রশস্ত। মাথা থেকে ৩১ থেকে ৪০ ডিগ্রি কৌণিকভাবে লেজ পর্যন্ত এটির দেহ ক্রমশ সরু হয় ও লেজ বেশ লম্বা। বাংলাদেশের জলসীমায় শনাক্ত হওয়াতে এটির নাম দেয়া হয়েছে ’বাংলাদেশি গিটারফিশ’। তবে স্থানীয় জেলেরা এটিকে ‘পিতাম্বরী মাছ’ নামে ডাকেন। 

সহযোগী গবেষক জায়িদুল ইসলাম বলেন, ”২০১৯ সালে আমরা কক্সবাজারে গবেষণার সময় প্রথম জেলেদের কাছে নতুন গিটারফিশের প্রজাতিটি পাওয়া যায়। এটিকে জেলেরা তাদের ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে ৪০-৬০ কিলোমিটার দূরের জলসীমা থেকে আহরণ করে থাকে এবং সেখানে পানির গভীরতা প্রায় ২০-৩৫ মিটার বলে জানায়। দেহের গঠন, বাহ্যিক আকৃতি এবং ডিএনএ বারকোডিং পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রজাতিটি শনাক্ত করা হয়।”

পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য গবেষণায় অবদান রাখায় কোরিয়ার সমুদ্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইন্সটিউটের অধ্যাপক ড. ইওনহোলী’র নামে মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম দেয়া হয়েছে ’গ্লুকোসটেগাস ইওনহোলী’। ড. ইওনহোলী মাছটির প্রধান উদ্ভাবক অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীবের পিএইচডি সুপারভাইজার।