
মহাবিপন্ন প্রজাতির কাঠ ময়ূরকে গুলি করে শিকারের পর রান্না করে খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ৩ জুন, শুক্রবার বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার পানেরছড়া জঙ্গলে শিকার করা হয় ময়ূরটি। ময়ূর শিকার ও খাওয়ার বিষয়টি শিকারি যুবক নিজেই ফেসবুকে পোস্টও করে। কিন্তু ঘটনাটি পরিবেশবাদীদের নজরে এলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন সেইভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ.ন.ম মোয়াজ্জেম হোসেন নিজ ফেসবুক টাইমলাইনে ঘটনাটির প্রথম শেয়ার করেন। ফেসবুকে ময়ূর শিকারির ছবি ও তথ্যপ্রমাণসহ আ.ন.ম মোয়াজ্জেম হোসেন লিখেন, ”গতকাল ককসবাজার পানেরছড়া সংলগ্ন খুনিয়াপালং জঙ্গলে ময়ূরটিকে গুলি করে শিকার করে ও জবাই করে খেয়ে ফেইসবুকে পোষ্ট করে রামু পানের ছড়ার বাবু নামের এই রাখাইন ছেলেটি।“
“একজনের মেসেজের ছবির সূত্র ধরে অনেক খোঁজাখুজির পর তথ্য দাতাকে চাপ দিলে ছেলেটির আইডি লিঙ্ক দেয়। কিন্তু প্রোফাইল লক থাকার কারণে গত রাত থেকে অনেক চেষ্টা করে তাকে সনাক্ত করতে সফল হলাম। ইতিমধ্যে ফেসবুকে চ্যাটে স্বীকার করে সে গুলি করে হত্যার পর ময়ুরটি জবাই করে বন্ধুবান্ধব নিয়ে খেয়েছে,“ উল্লেখ করেন আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ।
তিনি আরো লিখেন, ”তারা (শিকারিরা) প্রায় সময় নাকি বন থেকে এভাবে শিকার করে খায়। আমরা পার্বত্য এলাকা ও সমতলে থাকা উপজাতি ও আদিবাসীদের খাদ্যাভ্যাস ও রুচি পরিবর্তনে জনসচেতনতার কথা বলে অনেক শিক্ষিতজনও তেড়ে আসেন তাদের ঐতিহ্য রক্ষার দাবিতে।”
আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ প্রশ্ন করেন, ”বনে ও সাগরে জীববৈচিত্র্যে কতটা সংকটে তা এর মাধ্যমে বোঝা যায়। এত সুন্দর ময়ুরটিকে গুলি করে খাবার ইচ্ছে পোষণ করে, যে দেশে সেখানে জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা হবে কার মাধ্যমে কি করে? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি পারবে এই সুন্দর ময়ূরটির হত্যাকারীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা করতে?।”

বন্যপ্রাণীবিদেরা ছবিতে ময়ূরের পেখম ও দেহের ছবি দেখে জানান, ”এটি মেটে কাঠ ময়ূর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যপ্রাণী গবেষক মনিরুল এইচ খান বলেন, ময়ূরটি বিরল প্রজাতির। এটির ইংরেজি নাম গ্রে পিকক-ফেজেন্ট (Grey Peacock Pheasant)।“
প্রকৃতি সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সংস্থা- আইইউসিএন মেটে কাঠ ময়ূর প্রজাতিকে বিপন্নপ্রায় হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশে মহাবিপন্নের তালিকায় স্থান পেয়েছে এবং বন্যপ্রাণী আইনেও সংরক্ষিত।

প্রাণীবিদরা জানান, মেটে কাঠ ময়ূর বিরল দর্শনের আবাসিক পাখি। কালেভদ্রে দেখা মেলে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ অরণ্যে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে ১৯৭৮ সালেও দেখা গেছে। তবে হালে দেখা যাওয়ার নজির নেই। বাংলাদেশ ছাড়াও এই ময়ূর প্রজাতির বিস্তৃতি ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড ও চীন পর্যন্ত।
-এক নজরে মেটে কাঠ ময়ূর-
ঘন চিরসবুজ অরণ্য মেটে কাঠ ময়ূরের প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র। বনতলের ঝোপজঙ্গলে কিংবা বনপ্রান্তে এমনকি খোলা মাঠেও এরা বিচরণ করে। খাদ্যের সন্ধানে বের হয় সাধারণত জোড়ায় জোড়ায়। একাকী খুব কমই দেখা যায়। গৃহপালিত মোরগ-মুরগির মতো মাটিতে আঁচড় কেটে কীটপতঙ্গ বের করে খায়। খাদ্যের সন্ধান পেলে পুরুষ পাখি সুরে করে স্ত্রী পাখিকে কাছে ডেকে নিয়ে আসে। প্রজাতির সংখ্যা বিশ্বে সন্তোষজনক নয়। তবে গত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা হ্রাস পেলেও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি।