সাগরের ‘সবুজ সোনা’

সাগরের সী-উইড। ছবি: বেঙ্গল ডিসকাভার

মেরিন ম্যাক্রোঅ্যালজি, যা সি-উইড নামে বহুল পরিচিত। এটি সাগরের এক প্রকার তলদেশীয় জলজ উদ্ভিদ। অনেকে এটিকে সামুদ্রিক আগাছা বলেও মনে করেন। তবে সি-উইড একটি গুরুত্বপূর্ণ জলজ উদ্ভিদ।

বিশাল সমুদ্রতলদেশে বিচরণ করা সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণীর খাবার এবং আশ্রয়স্থল সি-উইড। পুষ্টিগুণের বিচারেও মানুষের খাদ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে বিশ্বব্যাপী।

যুগ যুগ ধরে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া এই শৈবাল সংগ্রহ করে আসছে বাংলাদেশ উপকূলের মানুষ। তবে এখন কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা ঝুঁকছেন সী উইড চাষে। কারণ উচ্চ খাদ্যমান সম্পন্ন এটি বাণিজ্যিক মূল্য বেশি। অবশ্য সরকারও নিচ্ছে নানান পদক্ষেপ। 

কক্সবাজারের নুনিয়ার ছড়ার বাসিন্দা জিয়া ভান্ডারী ও ফরিদা ইয়াসমিন দম্পতি এখন সফল সি-উইড চাষি। বাকখালি নদী এবং সংলগ্ন মহেশখালি চ্যানেলে সামুদ্রিক শৈবালটি চাষ করে এখন স্বাবলম্বী এই দম্পতি।

তাদের মতে, অক্টোবর-এপ্রিল পর্যন্ত সমুদ্রের পানিতে লবনাক্ততার পরিমান বেশি থাকে, তখন সি-উইড চাষের উপযুক্ত মৌসুম।

সম্প্রতি কক্সবাজারের সামুদ্রিক মৎস্য প্রযুক্তি কেন্দ্রে উচ্চ ফলনশীল এবং আর্থিকভাবে তুলনামূলক লাভজনক তিন প্রজাতির সি-উইড সনাক্ত করা হয়েছে। বলছিলেন সংস্থাটির জৈষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর শফিকুল ইসলাম।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় সব ধরনের খাবারের সাথে সি-উইড ব্যবহার করে খাদ্যের পুষ্টিমান বাড়ানো যায়। ক্যানসার, ডায়াবেটিকসসহ নিরাময়ের পাশাপাশি শরীরের বিষাক্ত পদার্থ অপসারনে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাই চাহিদা রয়েছে জাপান, কোরিয়াসহ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে।

সী-উইড চাষে স্বাবলম্বী জিয়া ভান্ডরী ও ফরিদা ইয়াসমিন।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্রে অথবা উপকূলীয় লবনাক্ত জলাশয়ে সি-উইড চাষে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবার আশঙ্কা থাকে।

বাংলাদেশে প্রথম সি-উইড উদ্যোক্তা কক্সবাজারের জাহানারা ইসলাম বলেন, সমুদ্রে ব্যাপক চাষাবাদ শুরু হলে, উপকূলে ভুমিক্ষয়সহ পানির গুণগতমান হ্রাস পেতে পারে। তাই পরিবেশ রক্ষার্থে খামারে সী-উইড চাষের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

ইতিমধ্যে পাঁচ তারকা হোটেলসহ ওষুধ, ডেইর, টেক্সটাইল, কাগজ শিল্প, খাদ্য ও প্রসাধনীতে ব্যবহার শুরু হয়েছে সী-উইডের। ব্যবহৃত হচ্ছে জৈব সার হিসেবেও। 

বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতো, সেন্টমার্টিন্স দ্বীপে প্রায় ১৪০ ধরনের ও বাকখালী-মহেশখালী চ্যানেলের মোহনায় ৫ প্রজাতি এবং প্যারাবন এলাকাতে ১০ প্রকারের সি-উইড পাওয়ার যায়।

সি-উইড জন্মানোর জন্য কিছু ভিত্তির প্রয়োজন পড়ে। সাধারণত বড় পাথর, প্রবাল, শামুক-ঝিনুক-পলিকিটের খোসা, প্যারাবনের গাছ-শিকড়, শক্ত মাটিতে সি-উইড জন্মে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০টি সি-উইডের নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে।

এগুলোর প্রায় ১০টি প্রজাতি বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন বলে জানা গেছে। এরমধ্যে সাগর পাতা, সাগর আঙুর, সাগর সেমাই, সাগর ঘাস, সাগর ঝুমকা, জিলাপি শেওলা, শৈবালমূললতা এবং লাল পাতা অন্যতম।