
বিশ্বে গো-মংসের বৃহৎ রফতানিকারক দেশ ব্রাজিল। গেলো বছর চীন, মিসর ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে ১৬ লাখ চার হাজার টন গো-মাংস রফতানি করেছে দেশটি। রোববার বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, মাংস ও সয়াবিনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আগুন দিয়েই সাফ করা হচ্ছে চিরহরিৎ বনটিকে।
ব্রাজিলের গো-মাংস রফতানিকারক সমিতির তথ্য উল্লেখ করে এএফপি’র জানায়, গেল দুই বছরে গো-গোশতের উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে ব্রাজিল। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মাংসের উৎপাদন ও মূল্য বেড়ে গেছে দশগুণ। জেবিএস, মিনারভা ও মারফ্রিগ নামের তিনটি কোম্পানি এই রফতানির নেতৃত্বে। আর এসব উৎপাদন এসেছে আমাজনের ধ্বংসের বিনিময়ে।
ইতিমধ্যেই রেকর্ডসংখ্যক অগ্নিকাণ্ড গ্রাস করেছে আমাজনকে। আশি হাজারের বেশি দাবানলের ঘটনা ঘটেছে বনটিতে। ফ্রান্সে জড়ো হওয়া জি-সেভেন সম্মেলনে নেতাদের মনোযোগ এখন আমাজনের দিকেই। বিশ্বজুড়ে হৈচৈ শুরুর পর আগুন নিয়ন্ত্রণে যুক্ত করা হয়েছে দেশটির সেনাবাহিনীকেও।

গ্রিনপিসের গবেষক রোমুলা বাটিসটা বলেন, আমাজন উজাড়ে মূল চালিকাশক্তির ভূমিকা রাখে গবাদিপশুর খামারগুলো। বনটির ৬৫ শতাংশ বৃক্ষশূন্যতার কারণ গোচারণ ভূমির জন্য।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে সবচেয়ে বড় অর্থকরী ফসল সয়াবিন। আর বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিরহরিৎ বনটি উজারে একসময় বেশি অবদান রেখেছে এই ফসলটি। সত্তরের দশকের পর সয়াবিনের চাষ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। তখন চাষীদের ঢল নামে এই বনটির দিকে। কীটনাশকের ব্যবহার ও আবাদের নতুন কৌশল তাদের উৎসাহিত করেছে।
ব্রাজিলের অর্থমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০১৮ সালে আট কোটি ৩৩ লাখ টন সয়াবিন রফতানি করেছে তারা। আগের বছরের তুলনায় যা ২২ দশমিক দুই শতাংশ বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিনের শীর্ষ সরবরাহকারী ব্রাজিল। চীনে সয়াবিনের বড় রফতানিকারক দেশটি। ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের সৌজন্যে চীনে ৩০ শতাংশের মতো সয়াবিন রফতানি বাড়িয়েছে ব্রাজিল।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের অস্থিরতায় নিজেদের গবাদি পশুর খাবারের জন্য ভিন্ন উৎস খুঁজতে হয়েছে চীনকে। নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে ব্রাজিলের দিকে ঝুঁকে পড়েছে বেইজিং। আমাজনের উজাড় হওয়া সাড়ে ছয় শতাংশ ভূমি চাষাবাদে ব্যবহার হচ্ছে। তবে সময়ের পরিক্রমায় এক্ষেত্রে সয়াবিনের ভূমিকা কিছুটা কমেছে।
বাটিসটা বলেন, ২০০৬ সাল থেকে নতুন বৃক্ষশূন্য হওয়া ভূমি থেকে সয়াবিন না কিনতে একটি স্থগিতাদেশ এখনো চলমান। ২০০৮ সাল থেকে বনশূন্য এলাকায় দুই শতাংশেরও কম সয়াবিন চাষ হচ্ছে।
আমাজন ছাড়াও সেরাডোসহ ব্রাজিলের অন্যান্য বন সয়াবিন চাষের জন্য উজাড় হয়ে গেছে। শূকর ও পল্ট্রি খামারের জন্য ব্রাজিলের সয়াবিনের প্রতি ইউরোপীয় ঝোঁকের নিন্দা জানিয়েছে গ্রিসপিস।